ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আনন্দ-উচ্ছ্বাসে জলকেলি উৎসব    

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
আনন্দ-উচ্ছ্বাসে জলকেলি উৎসব     জলকেলিতে মেতেছে সবাই-ছবি-বাংলানিউজ

কক্সবাজার: মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টা। নানা রংয়ে নিজেদের রাঙিয়ে কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কে জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলের সামনে জমায়েত হয়েছে   রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন। একপাশে সামিনায়ার নিচে সেজেগুজে পানিভর্তি ড্রাম নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা দশেক রাখাইন তরুণী। অন্যপাশে ঢাক-ঢোল আর কাসার ছন্দে খোলা মাঠে নেচে গেয়ে ফুর্তি করছে তরুণ- তরুণী, কিশোর- কিশোরী আর যুবক-যুবতীরা।

সবারই লক্ষ্য একে অন্যের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্যে দিয়ে পুরনো সব গ্লানি-দুঃখ-বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছরে পদার্পণ করা। আর সুখী-স্বাচ্ছন্দ্যময় রাখাইন বর্ষকে বরণ করে নেওয়া।

এরই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে বৌদ্ধ মন্দির সড়কে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে জলকেলি উৎসবে উদ্বোধনের অতিথিদের কন্ঠে। এদিকে সাংগ্রাই পোয়ে উৎসবকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

নতুন বর্ষের জলকেলি উৎসবকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের রাখাইন পল্লিগুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে। চলছে জমকালো অনুষ্ঠানমালা। রাখাইনদের সর্ববৃহৎ এ সামাজিক উৎসব দেখতে কক্সবাজারে পদার্পণ করেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও। শুধু পর্যটক নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা সামনে রেখে রাখাইন সম্প্রদায়ের উৎসবে যোগ দিচ্ছে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের লোকজন।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এই তিনদিন রাখাইন নর-নারীরা মেতে থাকবে আনন্দ উৎসবে।  

রাখাইন ডেভলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যক্ষ ক্যথিং অং বলেন, কক্সবাজার শহরের সাতটিসহ জেলায় মোট ১৬টি প্যান্ডেলে এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, জলকেলি উৎসব এটি আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ। আমরা মনে করি জলের স্পর্শে আমরা পূর্ণ হবো। আমাদের আগামীর দিনগুলো সুন্দর হবে।  

দুপুর থেকেই শহরের ফুলবাগ সড়ক, টেকপাড়া, মাছ বাজার রাখাইন পাড়া, হাঙ্গর পাড়া বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও মোহাজের পাড়ায় বইছে জলকেলি। রং-বেরংয়ের নতুন পোশাকে গানের তালে নেচে গেয়ে পানি ছিটিয়ে গেলো বছরের পাপ পঙ্কিলতা দূর করার প্রয়াসে রাখাইনরা ছুটছে এই গ্রাম থেকে ওই গ্রামে। প্রতিটি পাড়ায় আগতদের স্বাগত জানাতে তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল।  

আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছেন ছেন রাখাইন বলেন, জলকেলি উৎসব আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। এই তিনদিনের জন্য আমারা আনন্দ, হৈ-হুল্লোড় করবো।  

তরুন মং ছিন বলেন, আমাদের বন্ধুরা যারা জেলার বাইরে থাকে তারাও এসেছে। সবাই মিলে খুব মজা করবো। আমরা তিনদিনের জন্য বাদ্যযন্ত্র ঠিক করেছি। শেষের দিনের জন্য গাড়ি ঠিক করেছি আর সব বন্ধুরা নতুন কাপড় কিনেছি। সব মিলিয়ে জলকেলি উৎসব আমাদের জন্য খুবই অর্থবহ।  

এদিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, জলকেলি বা সাংগ্রাই উৎসব যাতে নিরাপদে হয় সেজন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ দায়িত্বে থাকবে। এছাড়া রাতেও পুলিশের প্রহরা থাকবে। তবে উৎসব পালনের নামে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
টিটি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ