ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুর্বল সমঝোতায় বাংলাদেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুর্বল সমঝোতায় বাংলাদেশ পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে স্বদেশে ফেরত গেছেন আখতার কামাল

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা পেতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। কিন্তু ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার তা আলাদা আলাদাভাবে করেছে।

১৩ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্দে এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের মধ্যে এই স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে মিয়ানমারও পৃথক চুক্তি করেছে।

আর পৃথক পৃথকভাবে করা চুক্তিকে দুর্বল সমঝোতা বলে মনে করছেন অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর।

বাংলানিউজকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে এগুচ্ছে সেটা এমন নয় যে, অন্যান্য জায়গায় যেমন হয় তেমন নিয়ম মেনে এখানেও হবে। এখানে যেহেতু দুটি দেশ বা পক্ষ আছে, সেখানে স্বাভাবিকভাবে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হওয়ার কথা। আগেও যখন ৯০ দশকে প্রত্যাবাসন হয়েছে তখন ইউএনএইচসিআর সরাসরি জড়িত ছিল তালিকা করার ক্ষেত্রে। তার পরেও ইউএনএইচসিআর যেদেশে কাজ করে সেদেশের নিয়ম বা আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে তারা কিছু করতে পারবে না। আবার রিফউজি কনভেনশনও বাংলাদেশ বা মিয়ানমার স্বাক্ষর করেনি। আলাদা আলাদাভাবেই দুটি দেশ ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে চুক্তি করেছে তা একটি অভাবনীয় ঘটনা। এটি এখন টেস্ট কেসের মত অবস্থা। এখন নিজেদের মধ্য স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিভক্তি সৃষ্টি হবেই। যেমন মিয়ানমার ইউএনএইচসিআর’র ওপর চাপ দিয়ে বলবে যে,  এভাবে করতে হবে। বাংলাদেশও বলতে পারে, ওভাবে না; এভাবেই করতে হবে।

আবার ইউএনএইচসিআর এখানে না-ও বলতে পারে না। আবার একেক পক্ষ বলতে পারে তোমরা এখানে কেন যুক্ত হবে না! শেষে দেখা যাবে ইউএনএইচসিআর দুই দেশকে কনভিন্স করার কাজেই সময় ব্যয় করে যাচ্ছে। ইউএনএইচসিআর’র ক্ষমতা এখানে খুব সীমাবদ্ধ থাকবে।

এখন পর্যন্ত সরকার ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে কী চুক্তি করছে তা প্রকাশ করেনি। ধারণা করছি সেখানে সীমাবদ্ধ জায়গায় তাদের জড়িত করা হচ্ছে। আসলে ইউএনএইচসিআর’কে সাইনবোর্ড হিসেবে দেখানো হতে পারে। ইউএনএইচসিআর অবশ্য তাদের নিজেদের মতো করে চেষ্টা করবে। কোনো জায়গায় জটিলতা সৃষ্টি হলে ইউএনএইচসিআর একসময় এই বলে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে যে, এটা দুই দেশই করুক। তারা কোনো প্রকার লড়াইয়ে যেতে পারবে না। এমন করলে হয়ত দুই দেশই বলবে তোমরা তোমাদের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেল।  

ইউএনএইচসিআর’র হাত-পা এখনই বাঁধা। গত কয়েক দিনে যেটা হয়েছে সেটাতো এ সমঝোতাকে হেলাফেলা করার নামান্তর। তারা মাত্র ৫ জনকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেকথা বলছে তা-ও ঠিক আছে। কারণ যাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে তারা টেকনিক্যালি নোম্যান্স ল্যান্ডে ছিল। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা তো আমারাও জানি। ওখানে তারা কেন আছে। ইউএনএইচসিআর তো সেখানে তাদের খাবার, কাপড় দিচ্ছে। তা না হলে নোম্যান ল্যান্ডে তারা আছে কিভাবে? মিয়ানমার এখন বলছে, ‘তারা আমাদেরই লোক। ’ প্রশ্ন হলো, তাহলে এতদিন নেয়নি কেন! এটি একটি গেমের মত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  
সব সমেই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা বলা হচ্ছে। উদারহণ হিসেবেও যদি ধরে নিই এই একটি মাত্র পরিবার যে স্বেচ্ছায় গেছে এমন কোনো্ প্রমাণ আছে?  নরমাল ক্যাম্পের চেয়ে নোম্যানস ল্যান্ডে যারা আছে তাদের পক্ষে এ ঝড়ঝঞ্ঝার সময় সেখানে অরক্ষিত অবস্থায় প্রকৃতির বৈরিতার মধ্যে টিকে থাকা শরণার্থী ক্যাম্পে টিকে থাকার চেয়েও কষ্টকর। এখন যদি মিয়ানমারে তাদের বলে তুমি কিছুদিনের জন্য এসো, তোমার বিষয়টি পরে দেখা যাবে তখন ঐ পরিবারের কী করার আছে থাকবে? কারণ তারা তো একটি সহায় সম্বলহীন, উপায়হীন, ক্ষমতাহীন একটি অসহায় পরিবার!

যে সমঝোতা ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে হয়েছে এই পরিবারটিকে নিয়ে গিয়ে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
কেজেড/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।