ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অপরাধীদের হুঙ্কারে ‘স্তব্ধ’ সিসিকের অভিযান

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
অপরাধীদের হুঙ্কারে ‘স্তব্ধ’ সিসিকের অভিযান কাস্টঘর ছড়ার ওপর নির্মিত ভবন

সিলেট: নিচে মসজিদ। উপরে চলে আসছিল অনৈতিক কর্মকাণ্ড, মাদক, জুয়ার আসর। ছড়ার ওপর ভবন তৈরি করে গড়ে উঠে অপরাধের আস্তানা।

দীর্ঘ এক যুগ ধরে চলে আসা সেই অপরাধের আস্তানা গুড়িয়ে দেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। কিন্তু উচ্ছেদের পর বাহবা কুঁড়ালেও অপরাধীদের হুঙ্কারে সিসিকের সেই অভিযান ‘স্তব্ধ’ হয়ে গেছে।

এদিকে আস্তানায় ফেরত আসতে মরিয়ে হয়ে ওঠেছে অপরাধীচক্র। এজন্য অপরাধীরা মামলার ‘হুঙ্কার’ দিচ্ছে। যে কারণে নগরীর বন্দরবাজার এলাকার সন্ধ্যাবাজার, কাস্টঘর ছড়ার ওপর নির্মিত ভবন ভাঙা শুরু হলেও অভিযান এখন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে জানিয়ে সিসিক সংশ্লিষ্টরা।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার সহায়তায় অপরাধীচক্র উচ্চ আদালতের দারস্থ হচ্ছেন। অবস্থান যেকোনো মূল্যে ফেরত চায় অপরাধীরা।

দীর্ঘদিনের অপরাধের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ায় সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অবশ্য, জনমত গঠনের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সিসিক।
কাস্টঘর ছড়ার ওপর নির্মিত ভবন
আধ্যাত্মিক রাজধানীতে পাপাচার বন্ধে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে এক কাতারে আনার চেষ্টা চলছে সিসিক। সিসিকের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাশে থাকার জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দলমত নির্বিশেষে সমাজ হিতৈষীরা। তাদের মতে, আধ্যাত্বিক রাজধানী সিলেটে কোনো পাপাচার ও অপরাধের আস্তানা দেখতে চান না।

এ ব্যাপারে এসিড সন্ত্রাস নিমূল কমিটি (এসোনিক) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক জুরেজ আব্দুল্লাহ গোলজার বাংলানিউজকে বলেন, আধ্যাত্বিক রাজধানীতে এ রকম পাপরাজ্য গড়ে ওঠায় হতবাক হয়েছি। এ ধরণের একটি সাহসী উদ্যোগের জন্য সিসিক তথা মেয়রের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।  

সিলেট জেলা আইনজীবী মোহাম্মদ লালা বাংলানিউজকে বলেন, পূণ্যভূমিতে অনাচার অসামাজিক কার্যকলার আস্তানার মদদকারী বিপক্ষে অবস্থান আইনজীবীদের। সিলেট বার এমন অন্যায় কাজে অপরাধীদের কখনো সহায়তা দেবে না। দীর্ঘ এক যুগ পরে হলেও অপরাধের আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়ায় সিসিক কর্তৃপক্ষ তথা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি।  

সিলেট রামকৃঞ্চ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী চন্দ্রনাথা নন্দ জি মহারাজ বাংলানিউজকে বলেন, যেটা সমাজের জন্য কল্যাণকর, সেটাই করেছেন মেয়র। তাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। এ ধরণের কাজে সব শ্রেণীর মানুষকে দলমত নির্বিশেষে সিসিকের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শুধু ইসলামিক নয়, সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকেও খারাপ কাজে প্রতিবাদি হওয়া প্রয়োজন। এই কাজে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে সমাজ হিতৈষীরা সিসিকের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।

অবশ্য, উচ্ছেদ অভিযানে কোনো ধরণের টালবাহানা চলবে না বলে হুশিয়ারি দিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করবো না। অপরাধের আস্তানা গুড়িয়ে দিতে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।  

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে সন্ধ্যাবাজার সংলগ্ন কাস্টঘর ছড়ার ওপর ভবন নির্মাণ করে শতাধিক কক্ষে চলছিল মাদক, জুয়া ও অনৈতিক। পাশাপাশি পৌরবিপনী একতলা ভবনের ছাদ দখল করে নির্মিত কক্ষেও ছিল মাদক ব্যবসা, জুয়া, শিলং তীর, পতিতাবৃত্তিসহ সব অপরাধের আখড়া। মার্কেটের নিচ তলায় মসজিদ। আর ছাদের ওপরে অপরাধের আস্তানা।

সিলেট সিটি করপোরেশন ভবনের মালিক হলেও তদারকির অভাবে সেখানে এক যুগের বেশি সময় ধরে ছিলো অপরাধের আস্তানা। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন না মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। অবশ্য এক যুগ পর হলেও ঘুম ভাঙেছে সিসিকের। কিন্তু উচ্ছদ কার্যক্রম শুরু করলেও ফের অনিশ্চয়তা ঘোর কাটেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
এনইউ/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।