ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কেমন হবে এবার বর্ষায় ঢাকার জলাবদ্ধতা!

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
কেমন হবে এবার বর্ষায় ঢাকার জলাবদ্ধতা! ফাইল ফটো

ঢাকা: ঝড়বৃষ্টির মাস বৈশাখ শুরু হয়েছে। মাঝেমাঝে ঝড়বৃষ্টির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখনই ভারী বৃষ্টি না নামলেও, সম্ভাবনা দেখে দিচ্ছে। পহেলা বৈশাখে এর কিছুটা লক্ষণ টের পেয়েছেন নগরবাসী।

তাই এবারও যে ভারী বৃষ্টির কবলে রাজধানীবাসী হাবুডুব খাবেন সেটা কিছুটা অনুমান করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে বর্ষা মৌসুম কতটুকু স্বস্তিকর  হবে সেই হিসেব কষার সময় হয়ে গেছে।

তবে আপাতদৃষ্টিতে গত বছরের চাইতে এবারের বর্ষায়ও যে তার  কমতি হবে না –এমন আশঙ্কা প্রবল।  
 
তবে আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তিনি বর্ষামৌসুম ও রমজানের পানি পরিস্থিতি নিয়ে গত ২ এপ্রিল ওয়াসাভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর ৯ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয় সভায়ও একই সুরে কথা বলেন তিনি। সেই সভা থেকে জানানো হয় ‘টানা দশ দিন বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতা হবে না। আর ভারী বর্ষণ হলে গত বছরের চাইতে পরিস্থিতি এবার অনেক ভাল থাকবে। ’
 
ওয়াসার এমডি’র কথার সুর ধরে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘গতবছর কোমরপানি ছিল তাহলে কি ভাল বলতে হাঁটু পানি হবে?’ এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি শুধু এটুকু বলেই খালাস, ‘এবার গতবছরের মত হবে না। ’ 

তবে জলাবদ্ধতা হবে না,এমন গ্যারান্টি দিতে নারাজ এই কর্মকর্তা।
 
জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসার কর্মপরিকল্পনায় দেখা যায়, ৩০ কিলোমিটার খাল পুন:খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে (রামচন্দ্রপুর, রূপনগর, বাউনিয়া, দেব-ধোলাই, সেগুনবাগিচা ও মাণ্ডা খাল)। যদিও বাস্তবে এখনো সেভাবে কাজই শুরু হয়নি। এছাড়া স্টর্ম ওয়াটার পাইপ ড্রেন ক্লিনিং ২৪৯ কিলোমিটার। ম্যানহোল কভার ফিটিং/ম্যানহোল স্লাব উঁচুকরণ, ক্যাচপিট নির্মাণ ও পুন:নির্মাণ ৭০০ টি।
 
গত বর্ষার বাস্তবতায় রাজধানীর মিরপুর, বনানী, মতিঝিল, সেগুনবাগিচায় অসহনীয় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। এসব এলাকায় এখনো কার্যত ড্রেন পরিষ্কার করা, ম্যানহোল কাভার ফিটিং/ম্যানহোল স্লাব উঁচু করা—এসবের কোনোকিছুই লক্ষ্য করা যায়নি।
 
জলাবদ্ধতার বিষয়ে দায়টা আসলে দুই মেয়রের ততোটা নয়। তারপরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিলেই নগরবাসীর রোষানলে পড়েন মেয়ররা। এনিয়ে অনেক কথাই শুনতে হয় তাদের। এবার গতবছরের সমতুল্য বৃষ্টি হলে কতদিন পানির নিচে থাকতে হবে তার সঠিক উত্তর কারোরই জানা নেই ।
 
রাজধানীর মিরপুর, বনানী, কাকলী এয়ারপোর্ট রোডের পাশ দিয়ে যেসকল ছোটখাটো জলাধার ছিল সেগুলো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য এই রাস্তার পাশের জলাধার বন্ধ করেই কাজ চলছে।
 
অন্যদিকে বিজয়সরণি থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত রাস্তায় মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ চলমান থাকায় পুরো ড্রেনেজ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে। কাজেই এবার গত বর্ষার চাইতে বেশি জলাবদ্ধতা হবে এটা স্বীকারও করেছেন সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা।
 
গত বর্ষার জলাবদ্ধতা নিয়ে এবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চাহিদা ছিল ২১৯ কিলোমিটার ড্রেনেজ পরিষ্কার করে জলাধার ঠিক রাখা। তবে এখন পর্যন্ত সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।
 
এনিয়ে ডিএনসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডর আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদা ছিল ২১৯ কিলোমিটার। তবে তহবিল না থাকায় আমরা এখনো টেন্ডারই করতে পারিনি। এখন বর্ষার আগে করতে পারব কি না বলা মুশকিল। চাহিদা ২১৯ কিলোমিটার থাকলেও আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মাত্র ৫৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। সেটাও অর্থাভাবে আটকে গেছে।
 
জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসা পুকুর খনন করার কথা বললেও বাস্ততা সেটা না করে শুধু পানির উপর ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কার করার  মধ্যেই তারা সীমাবদ্ধ রাখছেন তাদের কাজ। ফলে বৃষ্টি হলেই পানি গড়ানোর মতো পরিস্থিতি থাকবে না।
 
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে বেশি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ধানমণ্ডি, সদরঘাট, শান্তিনগর এসব এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। যেসব জায়গায় ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে আমাদের দুটি সাকার মেশিন দিয়ে সেসব স্থানে ড্রেন দ্রুত পরিষ্কার করছি। আশা করি গত বছরের চাইতে ভাল থাকব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭,২০১৮
এসএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।