সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ জনপদে সম্ভাবনাময় আরেকটি ফসল হিসেবে দেখা দিয়েছে সূর্যমুখী ফুল। একটা সময় বাড়ির আঙ্গিনায় শোভা বর্ধনের জন্য এ ফুল গাছটি লাগানো হলেও এখন এটি চাষাবাদ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।
সম্প্রতি উপকূলীয় এ জনপদে গিয়ে দেখা যায় সূর্যমুখী ফুলের চাষের অপার সম্ভাবনা। এ এলাকার লবণাক্ত অনাবাদী জমিতে স্বল্প খরচে বাড়ছে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। যার কারণে লবণ সহিষ্ণু এ ভোজ্য ফসল আবাদে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদরা বলছেন এতে অনাবাদী জমির পরিমাণ কমবে ও পূরণ হবে স্বাস্থ্যকর সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।
এদিকে মাঠের পর মাঠ হলুদের রাজ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা পর্যটকরা। হলুদের আভায় চারিদিকেই যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা। রাস্তার দু’পাশে একরের পর একর জমিতে সুর্যমুখী হয়ে হাসছে হলুদ। রুপে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে যে কারোরই। সবুজ মাঠ আর হলুদের ফুলের ওপর মৌমাছি, পাখির আনাগোনা চোখে পড়ার মত। ফুল থেকে তেল উৎপাদনের পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত হচ্ছে মধুও। স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন পতিত আনাবাদী জমিতে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করে গ্লোব কৃষি খামার। পরে ভাল ফলন ও লাভের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সাধারণ কৃষকদের মধ্যে। আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, লবণাক্ত জমিতে, অল্প পরিশ্রম ও খরচে ভালো ফলন পাওয়ায়, এতে আগ্রহ বেড়েছে তাদের। অনেক কৃষকই বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় গ্লোব কৃষি খামারের তত্ত্বাবধায়ক খাজা আহম্মদের সঙ্গে, তিনি জানান, এ মৌসমে তারা তাদেরও নিজস্ব ১১০ একর জমিতে চাষাবাদ করেছে সূর্যমুখীর। এছাড়া বাকি ১৯০ একর জমিতে চাষাবাদ করেছেন সাধারণ কৃষকরা। কৃষকদের বীজ সরবরাহ করেছে গ্লোব কৃষি খামার। তিনি আরও জানান, এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয় আর আয় হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ফসল উঠতে সময় লাগে মাত্র তিনমাস। বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে মাঠে ফসল রোপণ করার পর এপ্রিল-মে ফসল মাঠে উঠে। কৃষকের উৎপাদিত সুর্যমুখী বীজ গ্লোব কৃষি খামার ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে ঢাকার রুপগঞ্জে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তেল উৎপাদন করছে।
নোয়াখালী সদর উপজেলা ও সুবর্ণচরে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার চর আমান উল্লাহ, পশ্চিম চর ভাটা, চর আলা উদ্দিন, চর জব্বর, চর জুবলী, আন্ডারচর, ধর্মপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩’শ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই সূর্যমুখী ফুলের আবাদ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। এদিক বিবেচনায় কৃষি অফিস সামনের বছর থেকে কৃষকদের বীজ এবং সার সরবরাহ করবে সুর্যমুখী ফুল চাষের জন্য। এছাড়াও চাষাবাদ পদ্ধতি, পরিচর্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে জেলা কৃষি অফিসের। পুরো উপজেলায় যত অনাবাদী জমি রয়েছে সব জমিতে যদি কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করে তাহলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হতে বেশি দিন লাগবে না।
অপরদিকে স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটবে ভোজ্য তেলের। পরিকল্পিতভাবে করলে সূর্যমুখী ক্ষেত থেকেই মৌমাছির মাধ্যমে উৎপাদন করা যাবে মধু।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
এসএইচডি/এএটি