পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে কোনো আয়োজন না থাকলেও নতুন বছরকে বরণে রাখাইন সম্প্রদায়ের রয়েছে তিন দিনব্যাপী উৎসবের রেওয়াজ।
মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল থেকে আনুষ্ঠানিক শুরু হবে রাখাইনদের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘জলকেলি’।
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি বাবু মংক্য রাখাইন বাংলানিউজকে বলেন,‘আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট, দীনতা ও জরাজীর্ণতা ভুলে নতুনকে আবাহনের জন্য এ উৎসবের আয়োজন করি। এর মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি কামনা করা হয়। ’
আয়োজকেরা বলছেন, নববর্ষের মূল আয়োজন হবে নিজ নিজ এলাকায়। তবে এখন থেকে বাড়িতে ও ধর্মীয় উৎপসনালয়গুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন>>
** বৈশাখী মেলার নাচের ঢেউয়ে মুগ্ধ দর্শক
এরই ধারাবাহিতকায় সোমবার (১৬ এপ্রিল) স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় গুরুকে গোসল করানোসহ বৌদ্ধ প্রতীমায় চন্দন কাঠের পানি দিয়ে গোসল করানোর আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে।
রাখাইন ডেভলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যক্ষ ক্যথিং অং বলেন, কক্সবাজার শহর জলকেলির প্যান্ডেল হবে সাতটি। এছাড়া জেলার চকরিয়ার হারবাং, রামু , খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি,মহেশখালীসহ মোট ১৬ টি প্যান্ডেলে এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে।
তিনি আরো জানান, বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল। আর সনাতন ধর্মের পঞ্জিকা অনুসারে পহেলা বৈশাখ ১৫ এপ্রিল আর রাখাইনদের পহেলা বৈশাখ হয় গ্রহ নক্ষত্র হিসেব করে। সেই হিসেবে ১৭ এপ্রিল নতুন বর্ষের প্রথম দিন।
‘আর জলকেলি উৎসব এটি আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ। আমরা মনে করি জলের স্পর্শে আমরা পূর্ণ হবো। আমাদের আগামীর দিনগুলো সুন্দর হবে,’ বলেন ক্যথিং অং।
এদিকে সোমবার বিকেলে শহরের ফুলবাগ সড়কের সামনে ও বার্মিজ মার্কেট এলাকার বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে বর্ণিল পোশাকে বাদ্যযন্ত্রসহ নিজস্ব আকর্ষণীয় পাত্রে ধর্মীয় গুরুর জন্য কলা, দুধসহ বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে দেখা যায়।
এ সময় আলাপকালে আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছেন ছেন রাখাইন বলেন, জলকেলি উৎসব আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। এই ৩ দিনের জন্য আমারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। ইতোমধ্যে আমরা বান্ধবীরা মিলে একই রকম কাপড় কিনেছি এবং অনেক জায়গায় বেড়ানোর প্রস্ততি নিয়েছি।
বাংলানিউজকে রাখাইন তরুণ মং ছিন বলেন, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া জলকেলি উৎসব উপলক্ষে আমাদের মিলনমেলা বসবে। সবার সঙ্হে দেখা হবে।
রাখাইনদের এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে কক্সবাজারে ব্যাপাক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলি বা সাংগ্রাই উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে হয় সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
‘নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে উৎসব পালনের নামে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ’
এদিকে জলকেলি উৎসবে রাখাইন সম্প্রদায়সহ জেলাবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এথিন রাখাইন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তুলবো এবং আগামী দিনগুলো সবার জন্য মঙ্গল যেন মঙ্গলময় হয় সেটাই প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
টিটি/এমএ