এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। জীর্ণশীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানাতে শনিবার (১৪ এপ্রিল) বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের গোসাইকাচারি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছিলো চড়ক উৎসবের।
বিকেল থেকেই চলে উৎসবের মূল আয়োজনটা। বেশ বড়সড়ো করে গর্ত খোড়া হয় মাঠের মাঝখানে। তার মধ্যে খোঁড়া হয় আরেকটি গর্ত। সেটা কাঠের গোড়ার মাপে করা হয়। তারমধ্যে কাঠটি পুতে ওপর দিক বরাবর খাঁড়া করা হয়। সেই কাঠের উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুটের মত হবে।
অবশ্য পোতার আগে দুধে ধুয়ে নেওয়া হয় এই কাঠটি। মাখানো হয় প্রয়োজন মত ঘি। পাশাপাশি চলতে থাকে তন্ত্রমন্ত্র। সঙ্গে সেই লম্বা আকৃতির কাঠের ওপর বসানো হয় আরেকটি কাঠ। দেখতে অনেকটা জোয়ালের মত। সেই কাঠের মাথায় লাগানো হয় লম্বা এক গাছ দড়ি।
এরপর শুরু হয় চড়ক উৎসবের মূল পর্বটা। জ্যন্ত একজন মানুষের পিঠে বিঁধে দেওয়া হয় বড় বড় মাপের দু’টো বড়শি। দড়ির আরেকপ্রান্তে ঝুলতে থাকেন আরেকজন মানুষ। তারপর পিঠে বড়শি বিঁধে মানুষটি শূন্যে ঘুরতে থাকেন।
উপস্থিত ভক্ত দর্শকস্রোতা রুদ্ধশ্বাসে ওপরের দিকে চেয়ে থাকেন এবং ভয়ঙ্কর সেই উৎসব দেখতে থাকেন। চলতে থাকে সন্ধ্যা নাগাদ। এভাবে পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে ঘরে ফেরেন হাজারও ভক্ত সাধারণ।
সাধন রায়, সুশান্ত ভৌমিক, প্রবীর মোহন্তসহ চড়ক উৎসবে আসা একাধিক ভক্ত বাংলানিউজকে জানান, এ উৎসবের আয়োজনটা শুরু হয় চৈত্র সংক্রান্তির প্রায় সপ্তাহখানেক আগ থেকে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৃত্যগীতের মাধ্যমে ভিক্ষা সংগ্রহ করেন সন্ন্যাসীরা।
এরমধ্যে একদিন উপোষ থাকতে হয়। আরেকদিন রাতে নিরামিষ ভোজ চলে। চড়ক উৎসবের ঠিক দু’দিন আগে শ্মশান পূজা ও গৌরীর বিয়ে হয়। নানা ধরনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পরদিন কালীনাচ হয়।
এরপর ঢাকঢোল বাজিয়ে তোলা হয় চড়ক গাছ। ‘হাজরা’র শরীরে পিঠে বড়শি বিঁধে শূন্যে ঘোরানো শুরু হয়। আর এরই নাম হলো চড়ক পূজা বা চড়ক উৎসব।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
এমবিএইচ/এসএইচ