ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাটুরিয়ায় নারীর মরদেহ দাফনে বাধা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
সাটুরিয়ায় নারীর মরদেহ দাফনে বাধা! লাবনী আক্তারের মরদেহ

মানিকগঞ্জ: ''আমি গরিব মানুষ, দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থা। ঘরে দুই হাজার টাকাও  জমা নাই। মেয়ের মরদেহ নিয়ে সারারাত বসে রইলাম। ৫০ হাজার টাকা না দিলে মরদেহ কবরস্থানে দাফন করতে দেবে না বলে জানালো কবরস্থান কমিটি। এখন আমি এতো টাকা কই পাবো? কিভাবে মেয়ের দাফন করবো?''

শনিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির উঠানে মেয়ের মরদেহ নিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন হনুফা বেগম নামে মধ্যবয়সী এক নারী। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের বরুন্ডী এলাকার মোসলেম মিয়ার স্ত্রী হনুফা বেগম।

মোসলেম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক তিনি। বিয়েও করেছেন দু’টি। দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে লাবনী আক্তার (২৬)। শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে মেয়ের মা আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় এলাকার ওই বাড়ি থেকে মেয়েকে নিয়ে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।  

হাসপাতালের থেকে জানানো হয়, লাবনী স্ট্রোক করে পথেই মারা গেছেন। পরে মেয়ের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন হনুফা বেগম। এসময় লাবনীর স্বামী জালাল হোসেনও সঙ্গে ছিলেন।

তিনি বলেন, লাবনীর মরদেহ গোসল শেষে জানাজা ও কবরস্থানে মরদেহ দাফনের চেষ্টা করা হলে আপত্তি জানান গ্রামের লোকজন ও কবরস্থান কমিটি। ওই কবরস্থানে মরদেহ দাফন করতে হলে কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান ওই এলাকার মবেদ আলীর ছেলে হাসেন মিয়া, হুসেন মিয়ার ছেলে নুরু মিয়া এবং বজলুর রশিদের ছেলে মান্নান হুজুরসহ স্থানীয়রা। টাকা না দিতে পারলে মরদেহ দাফন করতে দেওয়া হবে না বলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হোসেন মিয়ার ছেলে নুরু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কবরস্থানের উন্নয়ন বাবদ এক গাড়ি ইট কেনার টাকা মৃতের পরিবারকে দিতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মুরুব্বিরা লাবনীর পরিবারের কাছে নগদ টাকা অথবা ওই ইট কিনে দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু এতে লাবনীর মা-বাবা রাজি হননি। তাই মরদেহ দাফনে আপত্তি জানানো হয়েছে।  

তবে যারা টাকা দাবি করেছেন সেই মুরুব্বি কারও নাম বলতে রাজি হননি হোসেন মিয়া।

এদিকে বজলুর রশিদের ছেলে মান্নান হুজুর বাংলানিউজকে জানান, লাবনীর পরিবারের কাছে তিনি কোনো টাকা-পয়সা দাবি করেননি।

কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ওরফে হাসেন আলীর বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

মৃত লাবনীর মামাতো ভাই বাবুল হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী স্বামীর বাড়ি এলাকায় দাফন হবে মৃত লাবনীর। কিন্তু বাবার বাড়ি এলাকায় মরদেহ দাফন করতে চাওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে এলাকায় নানান গুঞ্জন ওঠে। বহিরাগত মরদেহ দাফন করতে হলে কিছু টাকা দিতে হবে বলে জানান স্থানীয়রা। তাই লাবনীর পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়ে থাকতে পারে।  

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুর রহমান বাংলানি্উজকে বলেন, মরদেহ দাফনের জন্য ৫০ হাজার টাকা চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভুক্তভোগী পরিবার থেকে অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
জিপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।