ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘পারলে এবার তর লুকিং গ্লাস বাঁচা’ 

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৮
‘পারলে এবার তর লুকিং গ্লাস বাঁচা’  সড়কে গাড়ির অবস্থানই বলে দিচ্ছে কতোটা বেপরোয়া। ছবি: শাকিল/ বাংলানিউজ

ঢাকা: সকাল ঠিক ১০টা। রাজধানীর নতুন বাজার বাসস্টপেজে তুরাগ পরিবহনের একটি বাস যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। ঠিক এক মিনিট পরে তুরাগ পরিবহনের আরেকটি বাস হঠাৎ ডান পাশ দিয়ে এসে প্রথম বাসটিকে অতর্কিতভাবে চাপ মারলো। সঙ্গে সঙ্গে লুকিং গ্লাস ভাঙার শব্দ।

কিছুক্ষণের মধ্যে দুই বাসের যাত্রীদের মধ্যে হৈ চৈ লেগে যায়। কি হয়েছে কি হয়েছে! পরক্ষণেই চালকের আসনে বসা থাকা দুই চালকের হাতাহাতির।

হাতাহাতি অবসান ঘটলে প্রথম বাসের চালককে দ্বিতীয় বাসের চালকের বলতে দেখা যায়, তুই আমার গাড়ির লুকিং গ্লাস ভাঙছোস। পারলে তোর টা এখন বাঁচা।

লুকিং গ্লাস ভাঙার এই রেষারেষি চলে নর্দা বাসস্টপেজ পর্যন্ত। যাত্রীদের হাজার নিষেধ সত্ত্বেও নিজেদের মধ্যে এই ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা থামাননি চালকেরা। রাজধানীর সড়কে এ দৃশ্য প্রতিদিনকার।

সম্প্রতি এমন এক অসম প্রতিযোগিতার বলি হতে হয়েছে তিতুমীর সরকারি কলেজের ছাত্র  রাজীবের। দুই চালকের বেপরোয়া বাস চালানোর জন্য দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে রাজীবকে হারাতে হয়েছে তার ডান হাত।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় নিজের বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে এক গৃহিণী এমন আরেকটি দুর্ঘটনার শিকার হন। এ ঘটনায় তার মাজা ভেঙে যায়। সড়কে গাড়ির অবস্থানই বলে দিচ্ছে কতোটা বেপরোয়া।  ছবি: শাকিল/ বাংলানিউজ
মাত্র এক সপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া এমন দু’টি মর্মান্তিক দুর্ঘটনাও শিক্ষা হচ্ছে না রাজধানীর বাস চালকদের।

শনিবার (৭ এপ্রিল) সকালে মহাখালীতে এমন আরেকটি বেপরোয়া বাস চালানোর ঘটনায় মেতে ওঠেন বিহঙ্গ বাসের দুই চালক। তারা এমনভাবে একে অপরের বাসে চাপ মারতে থাকেন যে কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের বাস দু’টি উল্টে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।

তাদের এই বেপরোয়া বাস চালানো দেখে বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে নিজের তিন বছরে ছেলে সন্তান নিয়ে বসে থাকা আয়েশা আমিন চিৎকার করে ওঠেন। তার এই চিৎকার শুনে দুই চালকে কিছুটা ক্ষান্ত হন। পরে আয়েশা আমিন সঙ্গে সঙ্গে নিজের সন্তানকে নিয়ে বাস থেকে নেমে যান।

এসময় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তারা কি মানুষ না অন্যকিছু। এভাবে কি মানুষ গাড়ি চালায়। আমরা সবগুলো যাত্রী বারবার না করার পরেও তারা কারো কথা শুনছেন না।

আয়েশা আমিনকে বাস থেকে নামতে দেখে বাসের হেলপার সুজন তাকে নিয়ে মশকরা করে বলেন, আপা ভয় পাইলেন নাকি ঢাকা শহরে গাড়ি এমনেই চলে। আগে না গেলে তো যাত্রী পামু না, এত ভয় নিয়ে বাসে যাবেন কেমনে। সড়কে গাড়ির অবস্থানই বলে দিচ্ছে কতোটা বেপরোয়া।  ছবি: শাকিল/ বাংলানিউজ
বিহঙ্গ পরিবহনের দ্বিতীয় বাসটির চালক হাবিবকে এই বেপরোয়া বাস চালানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথম বাসের চালককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি মহাখালী হের আগে আইসা যাত্রী উঠামু বইলা হে আমার বিজয় সরণিতে এমন চাপ দিচ্ছিলো আমি আইল্যান্ডে বাস নিয়ে ধাক্কা খাইতে নিছিলাম। এখন হেরে আমি শিক্ষা দিমু না!

তখন মহাখালী বাসস্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী মিজান বাংলানিউজকে বলেন, তাদের এই শিক্ষা দেওয়া-নেওয়ার কারণে রাজীব নামের ছেলেটি হাত হারিয়েছে। তাদের এখনোই না দমানো গেলে আর কত রাজীব হাত পা হারাবে তার শেষ নেই।
শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী, গুলশান, লিংকরোড ও নতুন বাজার এলাকা ঘুরে একাধিক বাসের চালককে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীরা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তাদের বারবার না করলেও তারা কারো কথা কানে তুলছেন না।

এসব ঘটনা কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের সামনেও ঘটছে। তারাও কিছু বলছেন না। ফলে চালকরা নিজেদের মধ্যে বেপরোয়া বাস চালানোর প্রতিযোগিতা করে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৮
এমএসি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।