ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আতিয়া মহল

সংশয় ছিলো ৭৮ জিম্মি উদ্ধারে

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৮
সংশয় ছিলো ৭৮ জিম্মি উদ্ধারে আতিয়া মহল (ফাইল ছবি)

সিলেট: ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ দিনগত রাতে ‘মর্জিনা’ সূত্র ধরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরে অভিযান চালায় পুলিশ। মর্জিনা জঙ্গিদের ব্যবহৃত ‘কোড’ নাকি ‘জঙ্গি সংগঠনের নারীর নাম’ এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে ছিলো পুলিশও। রাত সোয়া ১টায় বাড়ির মালিক উস্তার আলীর কাছ থেকে পাওয়া মর্জিনা নামের একটি আইডি কার্ডের নাম্বার ও সূত্রে ভর করে ঘেরাওয়ের পর আবিস্কার হয় ‘জঙ্গি আস্তানা’ আতিয়া মহল। 

ওই সময়ে দক্ষিণ সুরমা থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা ভবনের নিচ তলায় জঙ্গিদের অবস্থান করা কক্ষের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দৌঁড়ে সরে আসেন।

পরদিন সকাল ৭টায় ভেতর থেকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় জঙ্গিরা।

 

আতিয়া মহলের জঙ্গি কাহিনী কাঁপিয়েছিলো সারাদেশ। জঙ্গিদের হাতে ২৮ পরিবারের ৭৮ জিম্মি কাহিনীতে বিশ্ব মিডিয়ার নজর ছিল সিলেটের দিকে।  

ভেতরে জিম্মিদের অবস্থা কি, সবাই জীবিত আছে কি না- নানা সংশয় কাজ করছিলো মানুষের মনে। ওইদিন বিকেলে সোয়াট সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আতিয়া মহল পর্যবেক্ষণ করেন এবং জঙ্গিরা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বুঝতে পেরে সেনাবাহিনীর সহায়তা চান। রাত ৮টায় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন।  

‘ভয়াল’ ২৫ মার্চ:  ২৫ মার্চ ভোরে বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে এরমধ্যেই কমান্ডোরা পাঁচতলা ভবনের ২৮টি ফ্ল্যাটের ৭৮ বাসিন্দাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। উদ্ধারদের মধ্যে ছিলেন ৩০ পুরুষ, ২৭ নারী ও ২১ শিশু।  

এদিন পৌনে ৯টায় কমান্ডোরা শুরু করেন ‘অপারেশন টোয়ালাইট’। এর আগে আশপাশের বাসিন্দারাও চলে যান নিরাপদ আশ্রয়ে। গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সিলেটের শিববাড়ি এলাকা।  

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জিম্মি উদ্ধার ও অভিযানের অগ্রগতি নিয়ে আতিয়া মহলের অদূরে একটি বাড়িতে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

আতিয়া মহলে জিম্মিদের উদ্ধার করা হচ্ছে (ফাইল ছবি)সাংবাদিকরা সন্ধ্যার কিছু আগে ব্রিফিংয়ে অংশ নিতে যান। ফেরার পথে গোটাটিকর মাদ্রাসা সংলগ্ন রাস্তার পাশেই ঘটে বোমা বিস্ফোরণ। এর ২৫ মিনিট পর দ্বিতীয় বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।  
বোম্ব ডিস্পোজাল টিমের সদস্য পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও আবু কাওছার চৌধুরী কালো পলিথিনে রাখা বোমা উদ্ধারে তৎপরতা চালান। একই সময় তাদের অদূরে ছুটে যান র‌্যাবের গোয়ান্দা ইউনিট প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। তিনি কাছে যাওয়ার আগেই বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এ তিন কর্মকর্তা। দু’দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ হারান সাতজন। আহত হন তৎকালীন দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি হারুনুর রশিদসহ ৪০ জন।

দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে গোটা সিলেট নগরে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ঘটনাস্থল ও আশপাশের ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ২৬ মার্চ পৌনে ১০টা থেকে ফের গুলি ও বোমার শব্দ। গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় আতিয়া মহল। অন্যদিকে হাসপাতালে স্বজনহারাদের আর্তনাদ ছিল গগণবিদারী।  

২৭ মার্চ ভোর থেকে শুরু হয় আবারও গোলাগুলি। সেদিন শিববাড়ি এলাকার বাতাসে ছিল বারুদের গন্ধ। সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং করে সামরিক গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, সেনা কমান্ডোদের অভিযানে তিন পুরুষ ও এক নারী জঙ্গি নিহত হয়েছেন।  

অভিযান শেষে ২৮ মার্চ আতিয়া মহল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ব্যারাকে ফিরে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করে।  

এ প্রসঙ্গে তৎকালীন সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ২৩ মার্চ মধ্যরাতে জঙ্গি আস্তানার খোঁজে গোটাটিকরে অভিযান চালাই। ২৫ মার্চ সেনাবাহিনীর ব্রিফিংকে টার্গেট করে বোমা নিয়ে আসে জঙ্গিরা। প্রথম বোমাটি বিস্ফোরণের পর দ্বিতীয় বোমা ফেলে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা। ওই এলাকা কর্ডন করে রাখতে গিয়ে দ্বিতীয় বোমা বিস্ফোরণে র‌্যাব-পুলিশের তিন সদস্য মারা যান, আহত হন অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৮
এনইউ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।