ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় স্মৃতিসৌধ পূর্ণতা পেলো না আজও

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৮
জাতীয় স্মৃতিসৌধ পূর্ণতা পেলো না আজও স্মৃতিসৌধের অপূর্ণতা বোঝা যায় মূল নকশার প্রতিচ্ছবিতেই। ছবি: বাংলানিউজ

সাভার (ঢাকা): একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে প্রাণ হারানো ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতির স্মারক হিসেবে ঢাকার সাভারের নবীনগরে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে তিন দফায় এ স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ হলেও রয়ে গেছে এখনও অপূর্ণ। স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহলের।

জানা যায়, সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্পটি বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবর রহমানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করে সরকারের স্থাপত্য অধিদফতর। তিন ধাপের নির্মাণ কাজে প্রথম পর্যায়ে ১৯৭২ সালেই ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূমি সংগ্রহ ও প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৭৪-১৯৮২ সালের মধ্যে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় গণ-কবর, হেলিপ্যাড, পার্কিংয়ের জায়গা, পেভমেন্টসহ বেশ কয়েকটি নির্মাণকাজ করা হয়। সবশেষে তৃতীয় ধাপের কাজ সম্পন্ন হয় ১৯৮২ সালের বিজয় দিবসের আগে। এ ধাপে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকায় স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ, কৃত্রিম লেক, পাশের সবুজ অঙ্গন, হাউজিং ব্যবস্থা ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ হয়।

এরপর ধোয়া-মোছা ও সংস্কার ছাড়া স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আর কোনো কাজ হয়নি। অথচ আদি নকশা অনুযায়ী, সৌধ এলাকায় একটি অগ্নিশিখা, দু’টি ম্যুরাল, একটি জাদুঘর, একটি গ্রন্থাগার, একটি ফ্লাওয়ার শপ এবং অডিও ভিজুয়াল কেন্দ্র স্থাপনের কথা ছিল। সাতটি স্তম্ভকে সাদা মার্বেল পাথর (মর্মর পাথর) দিয়ে মোড়ানোর ইচ্ছা ছিল নকশা প্রণেতা স্থপতি সৈয়দ মঈনুলের। ছিল আরও কিছু পরিকল্পনা।

স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে ঢুকতেই চোখে পড়বে আদি নকশার একটি প্রতিচ্ছবি। বোঝা যায়, কিছু কাজ হলেও কিছু কাজ রয়ে গেছে এখনো বাকি। আটকে রয়েছে কেবল অবস্থানগত নির্দেশিকায়। আবার বেশ কিছুর অবকাঠামো তৈরি হলেও করা হয়নি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এখন স্মৃতিসৌধে আছে কেবল সাতটি স্তম্ভ, ১০টি গণকবর, লেক, উন্মুক্ত মঞ্চ, ভিআইপি লাউঞ্জ, মসজিদ, শহীদ বেদীসহ কয়েকশ’ প্রজাতির গাছপালা।

সচেতন মহল মনে করেন, অপূর্ণ কাজ শিগগির সম্পন্ন করা দরকার। তাহলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাটি পূর্ণতা পাবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল বা একটি বৃহদাকার প্রতিকৃতিও এখানে নেই, স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রধান নেতা হিসেবে তারও কোনো স্মারক থাকতে হবে এখানে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।  ছবি: বাংলানিউজ
মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘সাভার স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমন একটি জায়গার অপূর্ণতা মেনে নেওয়া যায় না। স্মৃতিসৌধের পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান খুঁজে বের করতে হবে। এর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা উচিৎ। গ্রন্থাগারে রাখা উচিৎ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের বিভিন্ন বই। এতে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা সম্পর্কে জানতে পারবেন। ’

মুজিবুর রহমান মনে করেন, স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যারা আসেন, তাদের অনেকেই জানেন না স্মৃতিসৌধ কেন, এটি স্থাপনের কারণ কী! তাদের জানানোর জন্য হলেও গ্রন্থাগার দরকার।  

এ বিষয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে অনেক কিছুরই অপূর্ণতা রয়ে গেছে। যে কারণে স্মৃতিসৌধটি পূর্ণতা পাচ্ছে না। তবে চেষ্টায় রয়েছি অপূর্ণ কাজগুলো শেষ করার। আমি নিজেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি স্মৃতিসৌধকে পূর্ণতা দেওয়ার আর্জি নিয়ে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ’

তিনি বলেন, ‘স্মৃতিসৌধে দুটি ম্যুরাল স্থাপনের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র একটি, যেটি হয়েছে সেটিতেও নেই কোনো শিল্পকর্ম। শিখা অনির্বাণের জন্য জায়গা প্রস্তুত করা হলেও গ্যাস সংযোগ না দেওয়ায় এর কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। লাইব্রেরির জন্য জায়গা রাখা হয়েছে, ভবন নির্মাণ হয়নি। আবার ভবন থাকলেও মিউজিয়ামটিকে শুরু করা নিয়ে বারবার ধাক্কা খেতে হচ্ছে। এখানে অনেক দেশি-বিদেশি আসেন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু তারা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। ’

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে জরুরি মিটিং হয়েছে, সেখানে  সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির বাকি কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।