ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাবার কবরের পাশে মাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করলেন মাহি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
বাবার কবরের পাশে মাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করলেন মাহি মা-বাবার সঙ্গে মাহি

ঢাকা: নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার প্লেন বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত আবিদ সুলতানের একমাত্র সন্তান তামজিদ বিন সুলতান মাহি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মুখোমুখি হতে হয়েছে কঠিন বাস্তবতার। এ বয়সেই বাবাকে হারিয়েছেন। বাবার পথে এবার পাড়ি জমিয়েছেন মমতাময়ী মা-ও। নিজ হাতে মা আফসানা খানমকে বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছেন মাহি। এ সময় নিরবে তার দুই চোখের পানিতে বুকে ভেসে গেলেও মা-বাবা হারানোর শোকে মাহির মুখ দিয়ে কোনো কথাই আসেনি। মা-বাবা হারানোর যন্ত্রণা বুকে সইতে হচ্ছে ১৪ বছরের মাহিকে।

শুক্রবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের কবরের পাশে স্ত্রী আফসানা খানমকে চিরনিদ্রায় শায়িত করে এসে সাংবাদিকদের কাছে এমন আবেগময় ঘটনার বর্ণনা দেন স্বজনরা।

এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় যখন মার মৃত্যুর কথা চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন তখন থেকে মাহির মধ্যে এক ধরনের নিস্তব্ধতা লক্ষ করা যায়।

পরে যখন মায়ের মরদেহ নিয়ে মাহি উত্তরায় বাসায় আসনে তখনও তাকে চুপচাপ থাকতে দেখা যায়।

অতি শোকে মাহির এমন নিস্তব্ধতা দেখে স্বজন ও তার সহপাঠীদের তাকে নিয়ে চিন্তিত হতে দেখা গেছে। এই সময় স্বজনদেরও বার বার মাহিকে নিয়ে আবেগপ্রবণ হতে দেখা গেছে।

মাহির অনেক সহপাঠীই তাকে নিয়ে বলতে দেখা গেছে, মাহি অনেক শোকে কেমন জানি চুপ হয়ে গেছে।

কিন্তু মাকে কবরে চিরবিদায় দিতে গিয়ে আফসানা খানমের কলিজার টুকরা মাহি নিজেকে আর নিস্তব্ধ রাখতে পারেনি। নিজ হাতে মাকে বাবার কবরের পাশে শায়িত করতে গিয়ে নিরবে চোখের পানিতে বুক ভেসেছে মাহির।

মাত্র তিনদিন আগে (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বাবাকে কবরে চিরশায়িত করে আসে মাহি।

শুক্রবার উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম জামে মসজিদে আফসানা খানমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মাহি ও পরিবারের অন্য সদস্যরাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুরে স্বজনদের শেষবারের মতো দেখানোর জন্য ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল থেকে আফসানার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার উত্তরায় বাসায়। সেখানে নেওয়ার পর স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আফসানা। প্লেন দুর্ঘটনায় আবিদ সুলতানের মৃত্যুর পর তার শোকে গত ১৮ মার্চ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর থেকে আফসানা এই হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস২১১ এর পাইলট ছিলেন আবিদ। দুর্ঘটনার পর থেকেই ভীষণ চিন্তিত ছিলেন আফসানা। প্রথমে তাকে বলা হয়েছিল, আবিদ আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু পরে তার মৃত্যুর খবর আসে। এতে ভেঙে পড়েন আফসানা।

মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণাবোধ হলে ১৮ মার্চ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন জানানো হয়, তিনি স্ট্রোক করেছেন। সবশেষ ২০ মার্চ হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়, আফসানার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক ও অপরিবর্তিত রয়েছে। তার ব্রেইন কাজ করছে না। ন্যাচারাল ডেথ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ডেথ ঘোষণা করা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেলো না।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
এমএসি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।