ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

স্ত্রীর পাশে চিরনিদ্রায় মুক্তিযোদ্ধা নজরুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
স্ত্রীর পাশে চিরনিদ্রায় মুক্তিযোদ্ধা নজরুল চিরনিদ্রায় মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণকালে ইউএস-বাংলা এয়ালাইন্সের একটি প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত রাজশাহীর মহানগরীর উপশহর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের জানাজা নামাজের পর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৩ মার্চ) বাদ জুমা মহানগরীর গোরহাঙ্গা গোরস্থানে মেহগনি গাছের ছায়ায় স্ত্রী আখতারা বেগমের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এরআগে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে বেলা সাড়ে ১২টায় মরদেহ উপশহর ক্রীড়া সংঘের মাঠে পৌঁছায়।

এখানে অনুষ্ঠিত শেষ জানাজার নামাজে মানুষের ঢল নামে। এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানো হয়।

জানাজার নামাজে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। এসময় শোকাবহ হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। সবাই কফিন ছুঁয়ে শেষ বিদায় জানান তাকে।

জানাজার নামাজে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের, সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু প্রমুখ।
স্ত্রী আখতারা বেগমের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম।  ছবি: বাংলানিউজ
প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা। তবে তার পৈত্রিক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের বেগুনবাড়ী গ্রামে।

নজরুল ইসলামের জামাতা অ্যাডভোকেট ইমরান আলী বাংলানিউজকে বলেন, একই দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী আখতারা বেগমও নিহত হয়েছেন। মরদেহ দেশে আসার পর গত ২০ মার্চ রাজশাহীতে দাফন তাকে করা হয়। তবে মরদেহ শনাক্তে জটিলতার কারণে নেপাল থেকে নজরুল ইসলামের মরদেহ আসতে দেরি হয়েছে।

নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ গত ১৯ মার্চ দেশে আসে। এর পরে দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকলে নিহত নজরুল ইসলাম, অলিফউজ্জামান ও পিয়াস রায়ের মরদেহ দেশে আসে। বিমানবন্দরে দুই মেয়ে নজরুল ইসলামের মরদেহ গ্রহণ করে রাজশাহীর পথে রওনা হন।

তিনি বলেন, তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম ও শাশুড়ি আখতারা বেগম দম্পতি রাজশাহীর উপশহরের বাড়িতে থাকতেন। এছাড়া তার দুই মেয়ে ঢাকাতেই থাকেন। গত ২০ মার্চ আখতারা বেগমকে দাফনের দিন দুই মেয়ে বাড়িটিতে এসেছিলেন। পরে তারা আবার ঢাকায় চলে যান।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানো হয়।  ছবি: বাংলানিউজ
নিহত মুক্তিযোদ্ধা জরুল ইসলাম বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তার স্ত্রী আখতারা বেগম রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি সম্প্রতি অবসরে যান। স্বামীকে নিয়ে তাই অবসর যাপনে নেপালে ঘুরতে যাচ্ছিলেন। নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার বন্ধু হাসান ইমাম ও তার স্ত্রী বেগম হুরুন নাহার ওরফে বিলকিস বানুও ছিলেন। কিন্তু এই দুই বন্ধু তাদের স্ত্রীদের নিয়ে নেপালের মাটিতে পা রাখার আগেই প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন। এর মধ্যে হাসান ইমাম ও তার স্ত্রী বেগম হুরুন নাহার ওরফে বিলকিস বানু রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাদের মরদেহ গত ১৯ মার্চ দেশে ফেরার পর ঢাকায় দাফন করা হয়।

গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবনে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলার ওই প্লেনে রাজশাহীর তিন দম্পতিসহ মোট সাতজন ছিলেন। অন্য তিনজন হলেন- রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরানা কবির হাসি, তার স্বামী রকিবুল হাসান ও মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার গোলাম কিবরিয়ার নিউইয়র্ক প্রবাসী মেয়ে বিলকিস আরা মিতু।

রাজশাহীর এই সাতজনের মধ্যে বেঁচে আছেন কেবল হাসি। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলছে তার। তবে হাসির বাম হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছে। আর নিহত হাসান ইমাম, তার স্ত্রী বেগম হুরুন নাহার ওরফে বিলকিস বানু ও মিতুকে দাফন করা হয়েছে ঢাকায়। রকিবুলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে।

গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭১ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১। এতে নিহত হন ৪৯ জন। তাদের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি। তাদের স্মরণে ১৫ মার্চ দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
এসএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।