ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাড়তি চাঁদা: অনিয়মই নিয়ম হয়ে গেছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
বাড়তি চাঁদা: অনিয়মই নিয়ম হয়ে গেছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাটে অর্থ আদায়ের রশিদ। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকাসহ মধ্য-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌরুট। ফেরি সংকট, ঘন কুয়াশা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়াসহ নানা কারণে প্রায়ই বন্ধ থাকে এ নৌরুটের চলাচল। এতে উভয় ফেরিঘাট এলাকায় জমে যায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। যাত্রীবাহী পরিবহনের ভোগান্তি কিছুটা কম হলেও পণ্যবাহী ট্রাকের ভোগান্তির শেষ নেই কোনো ঘাটেই। 

আর এই ভোগান্তির সময়েই দুই ফেরিঘাটে জমজমাট হয়ে ওঠে বাড়তি অর্থ আদায়। নানা অজুহাতে পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকার চেয়ে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

যানবাহনের চাপ কম থাকলেও তাদের কাছ থেকে ফেরি পারের টিকিটের টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ২-৩শ’ করে টাকা আদায় করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) লোকজন।  

রাজবাড়ীগামী পণ্যবোঝাই পিকআপ চালক আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলছিলেন সে কথা। তিনি জানান, পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকা থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার জন্য ৭৩০ টাকার টিকিট তিনি ৮৫০ টাকা দিয়ে নেন। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বিআইডব্লিউটিসির কাউন্টারে থাকা লোকজন। সবাই একই নিয়মে টিকিট কাটেন বলেও আবুলকে জানান ওই কাউন্টারের কর্মীরা। এরপর ফেরি টার্মিনাল চার্জ ৬০ টাকা এবং ফেরিতে উঠে আবার ১০ টাকা দিতে হয় তাকে।  

রাজবাড়ীর পাংশা এলাকায় পণ্য নামিয়ে আবার রাজধানী অভিমুখে রওয়ানা হন আবুল। এবার গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দীর্ঘ যানজটের কথা বলে আবুলকে কয়েকজন যুবক জানান, ফেরি পার হওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে ঘাট পার হতে হলে তাদের মাধ্যমে টিকিট নিতে হবে। নতুবা ঘাট পার হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য সবমিলিয়ে আবুলের কাছে ১ হাজার ৩০০ টাকা দাবি করেন ওই যুবকেরা। টাকা না দিলে গাড়ি সামনের দিকে এগোতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয় তাকে। অগত্যা আবুল সে চাঁদা দিয়ে দিতে বাধ্য হন।

পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাক চালক বাংলানিউজকে জানান, নির্দিষ্ট টাকার চেয়ে ২-৩শ’ টাকা বেশি দিলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার নৌরুট পারাপার হওয়া খুব সহজ। বাড়তি টাকা না দিলে ভোগান্তির শেষ নেই উভয় ফেরিঘাটে।  

নৌরুট পারাপার হতে এসে বাড়তি টাকা দেওয়াও এখন একরকমের নিয়ম হয়ে গেছে জানিয়ে তারা বলেন, ঘাট এলাকায় যানবাহনের বেশি চাপ থাকলে প্রতি ট্রাকে প্রায় ৭-৮শ’ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দিতে হয়।

বিআইডব্লিউটিসি’র পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখা বাণিজ্য বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ২২শ’ থেকে ২৩শ’ যানবাহন নৌরুট পারাপার হয়। এর মধ্যে ছোট গাড়ি থাকে প্রায় ৭’শ, যাত্রীবাহী বাস ৭-৮’শ এবং পণ্যবাহী ট্রাক থাকে প্রায় ৭-৮’শ।  
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা বাণিজ্য বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন জানান, দৌলতদিয়া থেকে প্রতিদিন আড়াই হাজারের ওপরে যানবাহন পারাপার হয়। নৌরুটের মোট ১৬টি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি নষ্ট থাকায় বাকি ১৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিসি’র পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখা বাণিজ্য বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে ওই পিকআপ চালক আবুলের নম্বর দেওয়া হলে তিনি অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন। অবশ্য ওই পিকআপের চালককে তার কাছে পাঠিয়ে দিলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে বা একটি বিকাশ নম্বর দিলেও ওই টাকা বিকাশ করে ফেরত দেবেন বলে জানান তিনি।

তবে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নৌরুট পারাপারে বাড়তি টাকার বিষয়ে কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।