ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতি বছরে পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটছে সাড়ে ৩ লাখ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৮
প্রতি বছরে পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটছে সাড়ে ৩ লাখ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিশ্বের ইনজুরি জনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পানিতে ডুবে যাওয়া। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৩ লাখ ৬০ হাজার জনের মৃত্যুই ঘটছে পানিতে ডুবে। আর এ ঘটনার ৯০ শতাংশই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
 

এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। যার মধ্যে ১০ হাজার শিশুর বয়স ১-৪ বছর।

অথচ এই অকাল মৃত্যুর বেশিরভাগই পর্যাপ্ত তত্ত্বাবধান বা পরিবেশগত পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
 
মঙ্গলবার (২০ মার্চ) রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে ২০১৬ এবং ভাসা প্রকল্প বেইজলাইন জরিপ-২০১৬-১৭ প্রকাশ করে এবং এর ওপর সেমিনারের আয়োজন করে।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান।
 
সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিআইপিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম ফজলুর রহমান। এছাড়া পানিতে ডুবা প্রতিরোধ সম্পর্কিত কী-নোট উপস্থাপন করেন সিআইপিআরবি’র আইডিআরসি’র পরিচালক এবং ভাসা প্রকল্ডের পরিচালক ডা. আমিনুর রহমান, বিশ্বে পানিতে ডুবা পরিস্থিতি সম্পর্কে রয়েল ন্যাশনাল লাইফ বোট ইনস্টিটিউট (আরএনএলআই) এর হেড অব ইন্টারন্যাশনাল স্টিফ উইলস, দি জজ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ (টিজিআই) অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক অধ্যাপক রেবেকা আইভারস প্রমুখ।
 
জরিপে উঠে এসেছে বরিশাল বিভাগ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গপোসাগরে উপকূলে অবস্থিত এবং এখানে জলাশয় যেমন পুকুর, নদী, খাল বিলের আধিক্য থাকায় এই বিভাগে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি। উপকূলবর্তী হওয়ায় এই অঞলে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে দুর্যোগ যেমন বন্যা, জলোচ্ছাস, সাইক্লোনের প্রভাবও বেশি।
 
বরিশাল বিভাগের পানিতে ডুবার পরিস্থিতি বোঝার জন্য অক্টোবর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬টি জেলার মোট ২৪টি উপজেলায় ৯৫ হাজার ১২৪টি খানায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ১৬ জন মানুষের মধ্যে একটি বেইজলাইন জরিপ করা হয়। সেই জরিপে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে অন্য জেলার থেকে তিনগুণেরও অধিক মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে।
 
জরিপে আরও উঠে এসছে বরিশালে সব বয়সের ক্ষেত্রে বছরে প্রতি লাখে ৩৮ জনের মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে। আর সারাদেশে এই সংখ্যা প্রতি লাখে ১২ জন। বরিশালে ১-৪ বছরের শিশুদের প্রতি লাখে পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটে ২৬২ জন। আর সারাদেশে এই সংখ্যা প্রতি লাখে ৭২ জন।
 
জরিপে বলা হয়, যে কোনো পানির উৎসই পানিতে ডুবার কারণ হতে পারে। বরিশাল বিভাগে পরিচালিত বেইজলাইন সার্ভে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে যেসব মৃত্যু ঘটেছে তার ৬৭ শতাংশই পুকুরে আর খালে ১৫ শতাংশ, ডোবায় ১১ শতাংশ এবং নদীতে মাত্র ৫ শতাংশ। বিভিন্ন উপাত্ত থেকে জানা যায়, শিশুদের ডুবা জনিত মৃত্যুর ৬৩ শতাংশই ঘটে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে। কেননা এই সময় বাবা-মা বিভিন্ন গৃহস্থলীর কাজে ব্যস্ত থাকেন, যে কারণে শিশুদের দেখে রাখার পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না।
 
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ২০০৫ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইনজুরি প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা এবং পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে রয়েল ন্যাশনাল লাইফ বোট ইনস্টিটিউট (আরএনএলআই) ইউকে’র আর্থিক সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার আওতাধীন কলাপাড়া, বেতাগী ও তালতলী উপজেলায় পানিতে ডুবা প্রতিরোধের উদ্দেশে ভাসা নামক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৮
এসএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।