ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এ যেন বালুময় মরুপথ!

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৮
এ যেন বালুময় মরুপথ! রাস্তার বেহাল দশা

সিরাজগঞ্জ: দেখে বোঝার উপায় নেই এ সড়কটি এক সময় পিচ ঢালাই ছিল। পুরো রাস্তা হাতড়েও এখন মিলবে না এক টুকরো ইট-খোয়ার সন্ধান। শুকনো মৌসুমে এতো ধুলা থাকে যে মনে হয় যেন মরুপথ।

১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটির প্রায় ছয় কিলোমিটারের বেশিরভাগ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কখনো রাশি রাশি ধুলা, আবার কখনো পা ডুবে যাওয়া কাঁদা মাড়িয়ে এ সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।

 

বলা হচ্ছে, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর-উধুনিয়া আঞ্চলিক সড়কের কথা।  দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই এ অঞ্চলের খেঁটে খাওয়া কৃষক, দিনমজুর, কর্মজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষের।

উল্লাপাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত লাহিড়ী মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী ও উধুনিয়া ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন এ সড়ক দিয়েই। ১৫ কিলোমিটার এ সড়কটির প্রথম অংশ উল্লাপাড়ার শ্যামলীপাড়া থেকে মোহনপুর বাজার পর্যন্ত নয় কিলোমিটার ও দ্বিতীয় অংশ মোহনপুর বাজার থেকে উধুনিয়া পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার। ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০১১-১২ অর্থবছরে নতুন করে রাস্তাটি মেরামত করা হয়। পরে বন্যায় সড়কটির মোহনপুর বাজার থেকে উধুনিয়া পর্যন্ত মোট ছয় কিলোমিটার অংশ ভেঙ্গে যায়। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এ অংশটুকু সংস্কার না করায় ধীরে ধীরে কার্পেটিং উঠে গেছে, বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। একপর্যায়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রাস্তাটির এ অংশ। বর্তমানে রাশি রাশি ধুলাবালি নিয়ে কোনোমতে টিকে আছে জীর্ণ সড়কটি। শুকনো মৌসুমে ধুলায় পথচলা দায়।

স্থানীয়রা আরও জানান, এ সড়কে মোটরসাইকেল ছাড়া ভারি কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল চললেও মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। শুষ্ক মৌসুমে ধুলোর মধ্যে কোনোমতে চলতে পারলেও বর্ষাকালে হেঁটেও চলা দায়। কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলের মানুষ কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে পারছে না। আবার শহর থেকেও প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষকে।

কথা হয়, স্থানীয় কৃষক মোজাম আলী, আবুল হোসেন মোল্লা, আবু সাঈদ, লোকমান ফকিরসহ বেশ ক’জনের সঙ্গে। তাদের দাবি, খারাপ রাস্তার কারণে তাদের উৎপাদিত সবজি, পাট, সরিষা, গম ও ধান উপজেলা সদরে সহজে নিয়ে যেতে পারেন
না। ফলে ন্যায্যমূল্যও পান না। এছাড়া কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও অন্যান্য উপকরণ উপজেলা সদর থেকে আনতে দুর্ভোগে পড়তে হয়।

মোহনপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ার পর সড়কটি পরিদর্শন করেছিলন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই সময়ই তিনি সড়কটি ছয় মাসের মধ্যে মেরামতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মেরামত হয়নি। শুকনো মৌসুমে ধুলায় পথচলা দায়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ কিলোমিটার সড়কটির ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহীর আওতায় নেয়া হয়েছে। ১৮ ফুট প্রশস্ত এ সড়কটি হবে
আঞ্চলিক মহাসড়ক। ইতোমধ্যে ৩০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, অল্পদিনের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে। অনুমোদন পাওয়ার পর দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দুই/তিন মাসের মধ্যেই কাজ শুরু
করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।