ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এগোচ্ছে মেট্রোরেলের কাজ, এ মাসের শেষেই বসছে স্প্যান

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮
এগোচ্ছে মেট্রোরেলের কাজ, এ মাসের শেষেই বসছে স্প্যান ঢাকায় এভাবেই চলবে মেট্রোরেল (প্রতীকী ছবি)

ঢাকা: উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটারজুড়ে এখন তুমুল ব্যস্ততা। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি) বা মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজে কর্মীদের পাশাপাশি কর্মকর্তারাও এখন বিরতিহীন সময় কাটাচ্ছেন দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও এলাকায়। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ জনভোগান্তির কিছুটা কারণ হলেও যেন মেট্রোরেলের অগ্রগতি নগরবাসীর সামনে শিগগির উপস্থাপন করা যায়, সে তাগাদা সবার মধ্যে। এমনকি চলতি মার্চ মাসের মধ্যেই প্রকল্পের এই অংশে স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি চলছে।

দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নে যে আট প্যাকেজে ভাগ করে কাজ চলছে, দিয়াবাড়ি থেকে উত্তরা অংশটুকু প্যাকেজ-৩ ও প্যাকেজ-৪ এর অংশ। এ অংশ ২০১৯ সালের মধ্যেই উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সেজন্য প্রকল্পের এই অংশটির কাজই ধরা হয়েছে আগে।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্যাকেজ-৩ ও ৪ অংশে এখন চলছে মূল পাইলিংয়ের কাজ। আগারগাঁওয়ে প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে পাইলিং। এখন ব্যস্ততা কাস্ট ইন-সিটু পাইলের (মাটিতে গেঁথে দেওয়া পাইল নিয়ে) কাজে। প্রথমে নকশার লে-আউট অনুযায়ী ক্রেন দিয়ে বোরিং করা হচ্ছে। এরমধ্যে বিশাল বিশাল লোহার খাঁচা ঢোকানোর পর ঢালাই দিয়ে নির্মিত হবে পিলার।

আগারগাঁওয়ে প্রকল্প সাইটে কর্মরত শ্রমিকরা বলছেন, তারা লোহার খাঁচা তৈরির কাজে ব্যস্ত এখন। মূল পিলার দৃশ্যমান করার জন্যই এতো ব্যস্ততা। পিলার উঠে গেলেই যে বসিয়ে দেওয়া যাবে স্প্যান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার অংশ প্যাকেজের ভৌত অবকাঠামোগত কাজের অগ্রগতি ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, বাস্তব গড় অগ্রগতি ১০ শতাংশ। প্রকল্পের দুই প্রান্ত থেকে কাজ সম্পন্ন হতে হতে শেষ হবে মাঝে এসে।

কর্মকর্তাদের ভাষ্যে, মেট্রোরেল আর স্বপ্ন নয়, এটা বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার। বিষয়টি দেশবাসীকে জানান দিতে আগারগাঁওয়ে প্রকল্পের ৯ নম্বর স্টেশনের সামনে দু’টি স্প্যান বসানো হবে মার্চ মাসের শেষের দিকে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ৩০ মিটার। স্প্যান বসিয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে ১২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ও এই পথে ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এই প্যাকেজের নয়টি টেস্ট পাইলের মধ্যে সবগুলোরই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  

এ বিষয়ে ডিএমআরটিডিপি’র প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) আব্দুল বাকী মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আল্লাহর রহমতে ২০১৯ সালের মধ্যেই এই প্যাকেজের কাজ শুরু করবো। মার্চ মাসেই আগারগাঁও ও দিয়াবাড়ি অংশে স্প্যান বসাবো। দুই প্রান্ত থেকে কাজ শুরু করতে করতে মাঝখানে মিলিত হবে। আবার যদি দেখি কোনো অংশে কাজের অগ্রগতি নানা কারণে ভালো সেখানেও স্প্যান তুলে দেবো। স্প্যান বসানোর পাশাপাশি প্রতিটা স্টেশনেই আমাদের কাজ চলতে থাকবে।

ঢাকাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত এ মেট্রোরেলের স্টেশন সংখ্যা মোট ১৬টি। এগুলো হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার,উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট,কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিল। দু’টি স্টেশনের মধ্যে গড় দূরত্ব হবে ১ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার।

এ দীর্ঘ রুটের মেট্রোরেলে রোলিং স্টক থাকবে ২৪ সেট। প্রতি সেটে ছয়টি করে কার থাকবে। ঘণ্টায় গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার। আর যাত্রী পরিবহন করবে ৬০ হাজার। এরইমধ্যে রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। জাপানের কাউসুকি মিৎসুবিসি কনসোরটিয়াম কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সইও হয়েছে। চুক্তিতে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

প্রকল্প অনুযায়ী, পুরো ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রোরেলের বাকি অংশের (মতিঝিল পর্যন্ত) কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে। এরইমধ্যে প্রকল্পের ৩৮৩টি চেক বোরিংয়ের মধ্যে ২৪৭টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২ হাজার ৩৭৮টি বাণিজ্যিক পাইলের মধ্যে ৪৩৯টি বাণিজ্যিক পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল মাত্র ৩৭ মিনিটে যাওয়া যাবে। এই ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় গড়ে ৩২ কিলোমিটার (সর্বোচ্চ ১শ’ কিলোমিটার)। রুটটিতে চলাচল করবে ১৪টি ট্রেন। প্রতিটিতে ৬টি করে বগি থাকবে। প্রতি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতি ৪ মিনিট পর ট্রেন ছেড়ে যাবে। বহুলকাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেলের অবকাঠামো নকশা করা হয়েছে শতবছরের জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ