ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চাপা শোকে কেঁদে কেঁদে বিকেল হলো সন্ধ্যা 

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮
চাপা শোকে কেঁদে কেঁদে বিকেল হলো সন্ধ্যা  এপাশে তাকালে গগণবিদারী আহাজারি, ওপাশে তাকালে চোখের কোণে চিকচিক জল। প্লেন দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ হস্তান্তরের সময় এমনই শোকাবহ পরিবেশ ছিল আর্মি স্টেডিয়ামে। ছবি: ডিএইচ বাদল।

ঢাকা: এদিকে তাকালে চোখের কোণে চিকচিক জল। ওদিকে তাকালে নির্বাক চাহনি। এপাশে তাকালে বুক চাপড়ে আহাজারি। ওপাশে তাকালে অশ্রু লুকোতে মুখ আড়ালের ছল। পুরো আর্মি স্টেডিয়াম যেন প্রিয়জনহারাদের বেদনায় শোকাভিভূত হয়ে উঠলো।

নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের মরদেহ সোমবার (১৯ মার্চ) বিকেলে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে আসার আগে অপেক্ষারত স্বজনদের কান্নায় এমন শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে। মরদেহ পৌঁছাতেই কফিন জড়িয়ে স্বজনদের কান্না পরিবেশকে করে তুলে আরও ভারী।

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিশেষ প্লেনে করে বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয় নিহত ২৩ জনের মরদেহ। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে জানাজা ও মরদেহ হস্তান্তরের জন্য সোয়া ৫টায় নিয়ে আসা হয় আর্মি স্টেডিয়ামে।

দুর্ঘটনার পর টানা এক সপ্তাহ সীমাহীন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। সোমবার দুপুর থেকে সে অপেক্ষার উৎকণ্ঠা যেন আরও বাড়ছিল। প্রিয়জনের মরদেহ আসার অনেক আগেই আর্মি স্টেডিয়ামে ভিড় জমাতে থাকেন স্বজনরা। একটু পর পর খবর নিচ্ছিলেন কখন প্লেন আসবে। জানাজা কখন শেষ হবে। কখন প্রিয় মুখখানি দেখবেন।

বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্স আর্মি স্টেডিয়ামে আসার পর সেখান থেকে মরদেহ নামানোর সঙ্গে সঙ্গে সবার চোখ থেকে অঝোর ধারায় ঝরতে থাকে অশ্রু। মরদেহগুলো কাঁধে বয়ে সেনা সদস্যরা নামিয়ে আনেন লালগালিচায় সাজানো মঞ্চে। স্বজনদের চোখ তখন খুঁজছিলো প্রিয়জনের কফিনটা।

জানাজার পর মরদেহ হস্ত‍ান্তরের সময় পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের প্রায় সবার রোনাজারিতে সাধারণ জনতাও নিজেদের সামলাতে পারছিলেন না। উপস্থিত অনেকেই কেঁদে ফেলেন।  

নিহতদের কারও মা, কারও বাবা,  কারও বোন বা স্ত্রী মরদেহ গ্রহণ করেছেন। শোকে মুহ্যমান স্বজনরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাত ধরে মঞ্চে ওঠে চিরবিদায়ী প্রিয়জনের মরদেহ গ্রহণ করেন। মরদেহবাহী কফিন জড়িয়ে অনেকে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। বুক চাপড়াতে থাকেন বাবা-মা, কফিন জড়িয়ে নির্বাক বসে থাকেন বোন বা স্ত্রী। বড়-ছোট ভাই-বোনরা যখন গুমরে গুমরে কেঁদে উঠছিলে, তখন তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলছিলেন উপস্থিত অন্য স্বজনরা।

এই শোকাবহ পরিবেশের মধ্যেই ২৩ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যাদের মরদেহ স্বজনরা বুঝে নিয়ে গেছেন, তারা হলেন- পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, উম্মে সালমা, আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার, শারমিন আক্তার, নাজিয়া আফরিন, এফ এইচ প্রিয়ক, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক উজ জামান, খাজা সাইফুল্লাহ, ফয়সাল, সানজিদা ও নুরুজ্জামান।

সাত দিন আগে এই ২৩ জনও অন্য আরোহীদের মতোই দারুণ উচ্ছ্বাসে গিয়েছিলেন নেপাল। কিন্তু ১২ মার্চের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রাণ। সাত দিন আগে যে প্রিয়জন হাসিমুখে বুকে জড়িয়ে বিদায় নিয়েছে নেপাল যাচ্ছে বলে, সে স্বজন কেন আজ ফিরে এলো কফিনবন্দি নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে? এই আহাজারিতে যখন স্বজনরা বুক চাপড়াচ্ছিলেন, পড়ন্ত বিকেলও যেন তখন ভীষণ শোকে কাঁদতে কাঁদতে সন্ধ্যা হয়ে ডুবে গেলো ‘নিস্তব্ধ আঁধারে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘন্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮
এমসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।