ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অশ্রুসিক্ত নয়নে মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮
অশ্রুসিক্ত নয়নে মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা  আর্মি স্টেডিয়ামে অপেক্ষারত নিহতদের স্বজনরা। ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামের মাইকে ভেসে আসছে পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত। মঞ্চের এক পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছেন বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কো-পাইলট পৃথুলার মা। 

কখনও উচ্চস্বরে, কখনও আঁচলে চোখ মুছে। নিজের শোক সামলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন পৃথুলার বাবা আনিসুর রশিদকে।

কিন্তু মায়ের অবুঝ মন, অঝোরে ঝড়ছে অশ্রুধারা…যেনো থামছেই না।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেল ৩টা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে গিয়ে এমনই শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেছে। নেপালের কাঠমান্ডুতে প্লেন বিধ্বস্তে নিহত ২৩জনের মরদেহ এখানে নিয়ে আসা হচ্ছে।  

নিহতদের ছবি নিয়ে এসেছেন তাদের স্বজনরা।  ছবি: ডিএইচ বাদল অশ্রুসজল চোখে এখন আর্মি স্টেডিয়ামে অপেক্ষা করছেন হতভাগ্য এই ২৩জনের স্বজন। ফেল ফেল চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তারা।  

সোমবার দুপুরে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এসব মরদেহ নিয়ে ঢাকায় আসছে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ প্লেন।  

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সেখান থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হবে বিএস২১১ ফ্লাইট বিধ্বস্তে নিহত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ।

স্টেডিয়ামে স্বজনদের আহাজারিতে শোকাবগ পরিবেশ বিরাজ করছে।  ছবি: ডিএইচ বাদলবিকেল ৪টায় এখানে জানাজা শেষে তাদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।  

আরও পড়ুন>>
** 
স্বজনরা ইউএস-বাংলায়, মরদেহ গেলো কার্গোতে
** নীরবে আকুল চোখে ফেলিতেছ বৃথা শোকে...

তাই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে থেকেই আর্মি স্টেডিয়ামে ভিড় জমায়েত হন স্বজনরা। নিহতদের কাছের আত্মীয়-স্বজন ছঅড়াও এসেছেন কর্মস্থলের সহকর্মীরাও।  

দুর্ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর প্রিয়জনের মরদেহ পেতে যাচ্ছেন স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠছে স্টেডিয়ামের পরিবেশ। তাদের দেখে উপস্থিত সাধারণ মানুষের চোখও অশ্রু সজল হয়ে পড়ে।

স্টেডিয়ামে এসেছেন নিহত নজরুল ইসলামের খালাত বোন ও  তার স্ত্রীর বোন। এসেছেন নাজিয়া আফরিনের সহকর্মীরা।  ফ্লাইট বিএস২১১ এর কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মো. শাফির শাশুড়ি ও খালা এসেছেন, এসেছেন নিহত আখতারা বেগমের বোন মিনা।  

খাজা হোসেনের শাশুড়ি ফৌজিয়া রহমান বলেন, শাফি ওর কাজটা খুব পছন্দ করতো। আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। এক বছরের সংসার…এরমধ্যেই কেন এমন করলেন আল্লাহ।  

কান্না যেন থামছে না প্লেন বিধ্বস্তে নিহত নুরুজ্জামান বাবুর স্ত্রী সুলতানা বেগমের। কোলের সন্তান নিয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন স্বামীর মরদেহের অপেক্ষায়।

অবুঝ শিশুটিও মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে হাতের আঙুল কামড়াচ্ছে।  

নিহতদের ছবি নিয়ে এসেছেন তাদের স্বজনরা।  ছবি: ডিএইচ বাদল
যাদের মরদেহ ঢাকায় আসছে
বিমান বাহিনীর বিশেষ প্লেনে করে আনা ২৩ মরদেহ হচ্ছে- উম্মে সালমা, আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার, নাজিয়া আফরিন, এফ এইচ প্রিয়ক ও তার মেয়ে তামাররা প্রিয়ন্ময়ী, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহেরা তানভীন শশী রেজা, রফিক উজ জামান ও তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা এবং তাদের একমাত্র সন্তান অনিরুদ্ধ জামান, প্লেনের পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, ক্রু খাজা হোসেন ও ও শারমিন আক্তার ওরফে নাবিলা, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিবেদক ফয়সল আহমেদ এবং নুরুজ্জামানের।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮ 
এমসি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।