ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাবাকে পেয়ে ভালো আছে হিয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
বাবাকে পেয়ে ভালো আছে হিয়া বাবার কোলে হিয়া/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: মা শারমিন আক্তার নাবিলা (নিসাত) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু ছিলেন। বাবা ছিলেন বিদেশে। কাজের বুয়ার কাছে ছিলো হিয়া। হঠাৎ প্লেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উত্তরায় নাবিলার বাসায় ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি বাসায় তালা ঝুলছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাই থানায়। পরে জানতে পারি কাজের বুয়ার কাছ থেকে নাবিলার খালাতো বোন পরিচয়ে হিয়াকে নিয়ে গেছে তার বান্ধবী নুশরাত। পরবর্তীতে হিয়াকে উদ্ধার করে আমাদের হেফাজতে দেয় পুলিশ।

এর তিনদিন পর ১৫ মার্চ দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসে হিয়ার বাবা ইমাম হাসান। এখন বাবাকে পেয়ে মায়ের কথা অনেকটা ভুলে আছে হিয়া।

রোববার (১৮ মার্চ) সকালে নাবিলার শ্বশুরের বাসা নাখালপাড়ায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার স্বামী ইমাম হাসান, শাশুড়ি ও ননদ ফাতেমার। সেখানে এভাবেই কথাগুলো বলেছেন প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত শারমিন আক্তার নাবিলার শাশুড়ি ও হিয়ার দাদি বি‌বি হাজেরা।

নাতিন (ইনায়া ইমাম হিয়া) কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবাকে পেয়ে এখন অনেকটা ভালো। ও এমনিতে জন্মের পর থেকে আমাদের বাসায়ই বেশি থাকতো। বাবা বিদেশে যাওয়ার পর গত ১ মাস ১০ দিন যাবত মায়ের সঙ্গে উত্তরায় ছিলো। এরই মধ্যে এ দুর্ঘটনা।

দাদি আরো বলেন, নাবিলা ছিলো আমার মেয়ের মতো। ও আমাকে মা ডাকতো। আমার নাতিন একমাস বয়স থেকে আমার কাছেই থাকতো। মাত্র একমাস ১০ দিন আগে ওরা উত্তরার বাসায় উঠেছিলো। নেপাল যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল, আম্মা আমি সময় পেলে ওকে নিয়ে আপনার কাছে আসবো। এটাই ছিলো নাবিলার শেষ কথা।

দুর্ঘটনার খবর কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইদিন আমার মেয়ে ফাতেমা নিসাত (শারমিন আক্তার নাবিলা) আজকে ফ্লাইটে গেছে কী জানাতে চায়। আমি হ্যাঁ বলায় কোন ফ্লাইটে গেছে খোঁজ নিতে বলে ফাতেমা। তাৎক্ষণিক আমি কাজের মেয়েকে দিয়ে নাবিলার অফিসে ফোন করাই। তখন অফিস থেকে হিয়ার খোঁজ-খবর দিয়ে তাকে আমাদের কাছে রাখার জন্য বলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি উত্তরায় নাবিলার বাসায় ছুটে গেলাম এবং কাজের বুয়াকে কয়েকবার ফোন দিলাম। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পরে কাজের বুয়া হিয়াকে তার খালায় নিয়ে গেছে বলে জানায়। তখন বুয়াকে বললাম যে নিয়ে গেছে তার বাসার ঠিকানা দাও। বুয়া বলে, আমি কিছু জানি না। তখন আমার মেয়ের জামাই থানায় ফোন দেয়। কিছুক্ষণ পর চারজন পুলিশ এসে আমাদের কাছ থেকে সব শুনে বুয়ার বাসায় যায়। সেখান থেকে বুয়াকে নিয়ে ওই বাসায় গিয়ে হিয়াকে নিয়ে উত্তরা থানায় যায়। সেখান থেকে রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমরা বাসায় আসি।

নাবিলার হাজবেন্ড ইমাম হাসান বলেন, আমরা প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ফাস্ট ইয়ারে পড়ার সময় আমাদের সম্পর্ক হয়। ছয় মাসের রিলেশনের পরে আমরা বিয়ে করি। নিসাতের বাবা ২০০৯ সালে মারা যাওয়ার পর ওর ‘মা’ অন্য একজনকে বিয়ে করেন। তখন থেকে নিসাত তার দাদির কাছে থাকতো।

আপনিতো দুবাইতে ছিলেন দুর্ঘটনার খবর কিভাবে জানলেন? জবাবে হাসান বলেন ওইদিন মনও খারাপ থাকায় আমি রুমেই ছিলাম। হঠাৎ টেলিভিশনে দেখলাম ইউএস বাংলার একটি প্লেন বিধ্বস্ত হয়েছে। তখনই চ্যানেল আই এর খবর দেখে বিধ্বস্তের নিশ্চিত হলাম। পরে গত ১৫ মার্চ দেশে ফিরে আসি। আমি দুই মাস আগে বড় ভাইয়ের ব্যবসার কাজে দুবাইতে গিয়েছিলাম।

গতকাল (১৭ মার্চ) সকালে আমার মেয়েকে নিয়ে আমি উত্তরার বাসায় যাই। কিন্তু আমার শাশুড়ি বাড়িওয়ালাকে বলে রেখেছে ২৫ মার্চের আগে বাসায় ঢোকা যাবে না। বাড়িওয়ালা দু’পক্ষ এক হয়ে আসতে বলেছেন, তাই আমি সেখান থেকে ফিরে এসেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
এমএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ