ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গাভিয়ার খাল

সিসিকের ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পে ধীরগতি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
সিসিকের ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পে ধীরগতি গাভিয়ার খাল উদ্ধারে অভিযান চলছে

সিলেট: বর্ষায় সিলেট নগরবাসীর যন্ত্রণা জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলেই পথঘাট হয় জলমগ্ন। ছড়ার ময়লা উঠে আসে রাস্তায়। আবর্জনাযুক্ত পানি ডিঙিয়ে নগরের বাসিন্দাদের পথ চলতে হয়। বাসা-বাড়ির নিচে তৈরি করা সেফটি ট্যাঙ্কেও ঢোকে পানি। তাতে দেখা দেয় রোগব্যাধিও। নগরের এ যন্ত্রণা যুগ যুগ ধরে।

দীর্ঘদিনের এ দুর্ভোগ নিরসনে নগরবাসীর দাবিও দীর্ঘদিনের। নগরবাসীর কাছ থেকেও আদায় করা হয় ট্যাক্সের টাকা।

নগরীর ছড়াখাল উদ্ধারে বিভিন্ন সময় বরাদ্দ আসে। কিন্তু কাজ হয় লোক দেখানো।

২০১৩ সালে নগরীর প্রধানতম গাভিয়ার খাল উদ্ধার করে নৌকা ও স্পিডবোট চালিয়ে নগরবাসীকে স্বপ্ন দেখান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফ। তার এমন উদ্যোগ অর্থমন্ত্রীসহ সবমহলে ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পর আবারও থেমে যায় ছড়া-খাল উদ্ধার প্রক্রিয়া। ফের অবৈধ দখলকারীদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারায় গাভিয়ার খাল। ছড়ার দু’পাড়ে গড়ে উঠে বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা।

শনিবার (১৭ মার্চ) খালটির অবৈধ স্থাপনা ভেঙে পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু করেন মেয়র আরিফ। এদিন উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন সিসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট ছালেহ আহমদ, মখলিছুর রহমান কামরান, প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর, শামছুল হক পাটোয়ারীসহ সিসিকের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীতে বহমান ২৩টি ছড়া-খালের দৈর্ঘ্য ৭৩ কিলোমিটার। বিভিন্ন টিলা থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রবাহিত ছড়াগুলো মিলেছে সুরমা নদীতে। এসব ছড়া দখল, ভরাটে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

সিসিক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে নগরীর প্রধান ১১টি ছড়াসহ ২৩ ছড়া-খাল উদ্ধার, খনন, রিটেইনিং ও ইউ টাইপ ওয়াল নির্মাণে ২৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ আসে। ওই বছরের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে হাত দেয় সিসিক। নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবরকে প্রকল্প কর্মকর্তা দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদান্তেও ছড়া-খাল উদ্ধার কাজ শেষ হচ্ছে না-এমন ইঙ্গিত দিলেন সংশ্লিষ্টরা।

অবশ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ এই বর্ষা মৌসুম পরে শেষ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ছড়া-খাল রক্ষায় বার বার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও এতোদিন নগরবাসী এর তেমন সুফল ভোগ করতে পারেননি। এখন থেকে ছড়া, নালা, খাল, ড্রেন উদ্ধারে কাউকে ছাড় নয়, বরং এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সিসিক। এ কাজের পর নগরীর জলাবদ্ধতা অনেকটা কমে আসবে বলে দাবি সিসিকের এ কর্মকর্তার।
 
নুর আজিজ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল আবর্জনামুক্ত রাখতে প্রয়োজন নগরবাসীর সহযোগিতা। পাশাপাশি সুরমা নদী খননে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, সুরমা ভরাট হলে ছড়া-খাল ভরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এছাড়া কোনো ধরনের দখল হলে তাৎক্ষণিক সিসিক কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরীর অন্যতম সমস্যা নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহমান ছড়া-খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া। নগরীর পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এ থেকে উত্তরণে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ।

আরিফুল হক বলেন, ২০১৩ সালে একই লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে গাভিয়ার খাল উদ্ধার করে সেখানে স্পিডবোর্ড ও নৌকা চলাচল করিয়েছি। এরপর দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকায় ফের দখলে চলে যায় গাভিয়ার খাল।

মেয়র আরও  বলেন, এখন আর কেউ ছড়া, খাল, ড্রেন দখল করতে পারবে না। দখলদারদের খ‍ুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে। দখলদাররা যত বড় প্রভাবশালী হোক, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে সিসিক।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।