ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু আরেকটু সময় পেলে দেশ অনেক আগেই উন্নত হতো

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
বঙ্গবন্ধু আরেকটু সময় পেলে দেশ অনেক আগেই উন্নত হতো শিশু সমাবেশে বক্তব্যে রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

গোপালগঞ্জ: স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন দেশ গড়ার জন্য। তিনি যদি আরেকটু সময় পেতেন, তবে বাংলাদেশ বহু আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতে পারতো বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে আয়োজিত শিশু সমাবেশে তিনি বক্তৃতা করছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির জনকের আন্দোলন-সংগ্রাম-ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পর জাতির জনক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন। তিনি চেয়েছিলেন উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।

‘কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। আরেকটু সময় পেলে এই বাংলাদেশ বহু আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতে পারতো। কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। পঁচাত্তরের সেই কালরাতে তাকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়। ’

ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সময় প্রধানমন্ত্রী তার বোন শেখ রেহানাসহ বিদেশে ছিলেন বিধায় বেঁচে গেছেন জানিয়ে বলেন, শরণার্থী হিসেবে ছয়টি বছর কেটেছিল আমাদের দুই বোনের। এরপরও আমরা দেশে ফিরে বাবার আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর ২১ বছর আমরা ক্ষতায় আসতে পারিনি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই দেশকে এগিয়ে নিতে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশের জনগণ কখনো শোষিত-বঞ্চিত হবে না। তাই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জীবনের বেশির ভাগ সময় তাকে জেলে কাটাতে হয়েছে। এ দেশে একটি শিশুও পথশিশু থাকবে না। প্রতিটি শিশু লেখাপড়া করবে। সুন্দর জীবন পাবে। মাথা উঁচু করে চলবে।  

‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আজকেই খবর পেয়েছি। জাতির জনকের জন্মদিনে এতো বড় স্বীকৃতি জাতির জন্য অনেক বিশাল অর্জন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই। ’

প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জনগণের কল্যাণে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে তার সরকারের নানা উন্নয়ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।  

তিনি অভিভাবকসহ সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা প্রত্যেকে নিজের শিশু সন্তানের প্রতি বিশেষ নজর দেবেন। শিশুটি যেন মাদক এবং সন্ত্রাসে জড়িত না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এগিয়ে যাবো। জাতির পিতার আর্দশ বুকে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন হবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এরমধ্যে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আমি বিশ্বাস করি আমরা তা করতে পারবো।  

এসময় তিনি শিশুদের মনোযোগী হয়ে লেখাপড়া করার তাগিদ দেন। উল্লেখ করেন শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারের উপবৃত্তি ও বিশেষ ভাতার কথা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক জেলা যেন ভিক্ষুকমুক্ত হয় সে ব্যবস্থা করেছি আমরা। গ্রামেও যেন উন্নত জীবন যাপন করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুদের ভবিষ্যত যেন সুন্দর হয় সেজন্য আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি। তারাই এদেশকে গড়ে তুলবে, এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।  

সমাবেশের বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমাদের শিশুরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠবে, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করকে।    

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেয় শহরের সোনালীস্বপ্ন একাডেমির চতুর্থ শ্রেণি ছাত্রী প্রিয়ন্তী সাহা পিউ। সভাপতিত্ব করে শহরের এস এম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আরাফেত হোসেন।

এ সময় মঞ্চে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম বজলুল করিম চৌধুরী ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার উপস্থিত ছিলেন ।

প্রধান অতিথির ভাষণ শেষে চিত্রাংকন, ৭ মার্চের ভাষণ, গল্প বলা, রচনা প্রতিযোগিতা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা।

পরে প্রধানমন্ত্রী দর্শক সারিতে বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এরপর শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে ফিতা কেটে বইমেলা উদ্বোধন ও শিশুদের আঁকা ‘আমার ভাবনায় ৭ই মার্চ’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।  

তার আগে সমাবেশ মঞ্চে শেখ রাসেল স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্তকরণ, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের ওপর লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ার দুইজন নারীর হাতে সেলাই মেশিন বিতরণ ও ‘উঠব জেগে, ছুটব বেগে’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮/আপডেট ১৬৪৫ ঘণ্টা
এমএ/এইচএ/

** বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।