ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নেপাল থেকে ফিরে বিয়ের কথা ছিলো আলিফের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৮
নেপাল থেকে ফিরে বিয়ের কথা ছিলো আলিফের প্লেনে ওঠার আগে আলিফের সেলফি, সন্তান হারিয়ে কাঁদছে পরিবার

খুলনা: বাবা তুমি কোথায় চলে গেলা বাবা। আল্লাহ আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দাও। আমার সন্তানকে এনে দাও আল্লাহ। আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার বাবা তো আর জীবিত ফিরতে পারবে না।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে ধরা গলায় আবার শুরু, বিদেশ থেকে ফেরার পরেই আমার বাবার বিয়ের কথা ছিলো। ও বলেছিলো, আমার বিয়েতে অনেক ধুমধাম হবে, বিয়েতে অনেক মজা করবো।

কিন্তু কি হয়ে গেলো...

মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত খুলনার আলিফুজ্জামান আলিফের বাসায় গেলে দেখা যায়, বিলাপ করতে করতে আলিফুজ্জামানের বাবা  মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা আসাদুজ্জামান এসব কথা বলছেন।

সোমবার (১২ মার্চ) নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত আরোহীদের মধ্যে আলিফ ছিলেন একজন। আলিফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে। খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। খুলনার বিএল কলেজ থেকে এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। ৩ ভাইয়ের মধ্যে আলিফুজ্জামান ছিলেন মেজো।

আলিফ রূপসার বেলফুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং খুলনার আহসান উল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৭ সালে কাজের সন্ধানে সৌদিতে যান। সেখান থেকে ২০১০ সালে ফিরে খুলনা সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে ডিগ্রি পরীক্ষা দেন। সর্বশেষ তিনি খুলনার বিএল কলেজ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এখনও কয়েকটি পরীক্ষা বাকি।

আলিফের নিহত হওয়ার খবর শোনার পর থেকে অবিরাম কান্নায় এখন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মায়ের গলার স্বর। অসহায়ের মতো তিনি চেয়ে আছেন। দেখছেন এদিক-ওদিক। খুঁজছেন তার ছেলেকে।

আলিফদের তৃতীয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন আলিফ। ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ে আলিফের ছোট চাচা বাবর আলীসহ বড় ভাই আশিকুর রহমান হামিমের দিকে। আলিফকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান তারা। একাধারে কেঁদেই চলেছেন, আর আলিফের সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতির কথা আওড়াচ্ছেন। সময় যতই গড়াচ্ছে ততই স্বজনদের ভিড় বাড়ছে, বাড়ছে শোকের মাতম।

আলিফের বড় ভাই আশিকুর রহমান হামিম বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় যশোর থেকে বিমানে ঢাকায় যাওয়ার পথে মায়ের সঙ্গে আলিফের শেষ কথা হয়- মা নেপালে পৌঁছেই তোমাকে ফোন দেবো, কিন্তু সে আর ফোন দিতে পারেনি।

তিনি জানান, আলিফের বন্ধুরা নেপালে চলমান বাণিজ্য মেলায় স্টল দিয়েছে। সেখানে বেড়াতে যাওয়ার জন্যই আলিফ ৪ দিনের সফরে নেপাল যায়।

আলিফুজ্জামানের খালাতো দুলাভাই শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ৬ মাস আগে আলিফের বড় ভাই বিয়ে করেছে। ও ঠিকাদারি করে। আলিফকে বিয়ে দেওয়ার কথা চলছিলো।

আলিফের বন্ধু জিয়াউল হক মিলন বাংলানিউজকে বলেন, আলিফ আমার বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী ছিলো। ওর সঙ্গে দেখা হলে সবসময় হেসে কথা বলতো। ওর মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার মধ্যে ১০ দিনের বিরতি থাকায় সেই সময়ে নেপাল যাচ্ছিল। ও ঘোরাঘুরি পছন্দ করতো। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ভারতে গিয়েছিলো।

আলিফের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ি। তারপর কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে আলিফের দেখা হলে বলে দোস্ত সাবধানে মোটরসাইকেল চালাবি। আমি নেপাল যাচ্ছি। দোয়া করিস।

আলিফের খালাতো বোন রাহিমা আক্তার শান্ত জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার ফ্লাইটে তার খালু শাহাবুর রহমান আলিফের মরদেহ আনতে নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

প্লেন বিধ্বস্তে নিহত আলিফের জীবনের শেষ সেলফি

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৮
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।