ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছেলে হারিয়ে নিঃস্ব রকিবুলের মা

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৮
ছেলে হারিয়ে নিঃস্ব রকিবুলের মা  প্লেনে ওঠার পর জীবনের শেষ সেলফি, রকিবুল ও হাসি

সিরাজগঞ্জ: এলাকার মানুষের চোখে রত্ন ছিলেন প্রকৌশলী রকিবুল হাসান ঝন্টু। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনার ভাঙন কবলিত নিভৃত চরাঞ্চল বাগুটিয়ার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি।

অত্যন্ত মেধাবী রকিবুল বিদেশি একটি কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নেপালের কাঠমাণ্ডুতে বিধ্বস্ত হওয়া প্লেনের যাত্রী ছিলেন রকিবুল ও তার  স্ত্রী হাসি খাতুন।

গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যু সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন হাসি। রকিবুলের অকাল মৃত্যুতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসীসহ আত্মীয়-স্বজনরা।

সোমবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যার পর এলাকাবাসী জানতে পারেন প্লেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন রকিবুল। খবর পাওয়ার পরই নিহত রকিবুলের গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমান স্থানীয়রা। এ সময় গ্রামের বাড়িতে নিকট আত্মীয়-স্বজন ছাড়া রকিবুলের পরিবারের কেউ ছিলেন না। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার প্রতিটি মানুষের মুখ ছিল বিষাদময় আর চোখ ছিল অশ্রুসজল।

স্থানীয়রা জানান, একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয় মেধাবী রকিবুল। তার বাবা প্রয়াত রবিউল করিম মাস্টার ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রকিবুল একাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে মারা যান তিনি। বাবার মৃত্যুর পরও পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। একের পর এক সব পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন এবং সবশেষে রাজশাহী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি নেন।

নিহত রকিবুলের গ্রামের বাড়িতে স্বজনরাইলেক্ট্রিক ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রকিবুল ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। বিনয়ী আচরণের অধিকারী রকিবুলের ছিল এলাকার লোকজনের প্রতি অগাধ ভালবাসা। গ্রামে এলেই তিনি সব আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেখা করতেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। নিরহঙ্কারী মনের এমন মানুষকে হারিয়ে এলাকার প্রতিটি মানুষ হতবিহবল হয়ে পড়েছে।

নিহত রকিবুলের চাচাতো ভাই বাবু বলেন, দু’বছর আগে টাঙ্গাইল জেলার হাজারীঘাট এলাকার হাসি খাতুনকে বিয়ে করেন রকিবুল। তার স্ত্রী রাজশাহী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। একই দুর্ঘটনায় তিনিও আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, রকিবুলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ওই পরিবারের বংশপ্রদীপ নিভে গেল। বাবার একমাত্র ছেলে রকিবুলের এক বোন রুমা আক্তার বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। বৃদ্ধ মা ছেলের সঙ্গে ঢাকাতেই থাকতেন।

বাগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাহ্হার আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, রকিবুল ছিলেন এ দুর্গম চরাঞ্চলের রত্ন। মেধা ও শ্রম দিয়ে তিনি নিজের জীবন গড়ে তুলছিলেন। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই তার মৃত্যু, এটা কেউ সহজে মেনে নিতে পারছেন না।

তিনি আরও বলেন, ছেলেকে হারিয়ে রকিবুলের মা এখন নিঃস্ব। এক মেয়ে রুমা আক্তার বিয়ে করে আমেরিকায় বসবাস করছেন। অসহায় বৃদ্ধ মা এখন ঢাকার নিউমার্কেট এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন। তাকে দেখার মত আর কেউ রইলো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।