ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্লেন বিধ্বস্তে নিহত আলিফের জীবনের শেষ সেলফি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৮
প্লেন বিধ্বস্তে নিহত আলিফের জীবনের শেষ সেলফি প্লেনে ওঠার আগে আলিফের সেলফি, যা এখন শুধুই ম্মৃতি

খুলনা: আলিফুজ্জামান আলিফ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি এটিই হবে তার জীবনের শেষ সেলফি। এটিই হবে তার জীবদ্দশার শেষ স্মৃতি। সেলফি তোলার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে থেমে গেলো তার জীবন প্রদীপ। স্মৃতি হয়ে রইলো ফেসবুকে আপলোড করা তার জীবনের শেষ কয়েকটি সেলফি।

সোমবার (১২ মার্চ) নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ৪১ জনের মধ্যে তিনি একজন। আলিফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে।

খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। খুলনার এমএম সিটি কলেজ থেকে এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন।

৩৪ বছর বয়সী আলিফুজ্জামান সকালে যশোর বিমান বন্দর থেকে প্লেনে করে ঢাকা যান। সেখান থেকে দুপুরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ওই ফ্লাইটে চাপেন নেপালের উদ্দেশ্যে।

যশোর বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নের আগে ফেসবুকে সেলফি পোস্ট করে লিখেছিলেন- By by Khulna welcome Dhaka 12/03/201।

খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আরাফাত হোসেন পল্টু রাত ৮টা ২০ মিনিটে বাংলানিউজকে বলেন, আলিফের এক বন্ধু ফারুক নেপালে আছেন। তিনি কাঠমান্ডু বিমান বন্দরে আলিফকে রিসিভ করতে আসেন। ফারুক আলিফের মরদেহ দেখে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।

আলিফুজ্জামানের খালাতো দুলাভাই শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ৩ ভাইয়ের মধ্যে আলিফুজ্জামান ছিলো মেঝ। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা আসাদুজ্জামান। কয়েকদিন আগে ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে আলিফ নেপাল যাচ্ছিলো ঘুরতে। সকালে যশোর থেকে প্রথম ফ্লাইটে ঢাকায় যায়। কয়েক দিন আগে আমাকে বলে, আমিতো কোনো সঙ্গী পেলাম না দুলাভাই আমার সঙ্গে চলেন। না রে তুমি যাও। আমি এ সময় যেতে পারবো না।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, রোববার রাতেও থানার মোড়ে একসঙ্গে বসে চা খেয়েছি। কত গল্প করেছি। আমি ওকে শরীর ভালো না বলে যেতেও নিষেধ করেছি। ৬ মাস আগে আলিফের বড় ভাই বিয়ে করেছে। ও ঠিকাদারি ব্যবসা করে। ঘোরার খুব পাগল ছিলো। বন্ধুদেরও যেতে রিকোয়েস্ট করেছিলো, কিন্তু কেউ যায়নি।

আলিফের নিকটাত্মীয় মো. সাব্বির খান দ্বীপ জানান, আলিফ নেপাল ভ্রমণের জন্য সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়। সে যশোর থেকে প্রথম ফ্লাইটে ঢাকায় যায়। দুপুর পৌনে ১টার দিকে ইউএস-বাংলার (ফ্লাইট বিএস২১১) ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয় নেপালের উদ্দেশ্যে। সে ফ্লাইটের সর্বশেষ আসনে ছিলো।  

প্লেনের ভেতরে আলিফের সেলফিএদিকে দুর্ঘটনার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আলিফদের আইচগাতির বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ লোকজনের ভিড় জমেছে। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোক বিরাজ করছে।  

আলিফের মৃত্যুর খবরে খুলনা জেলা ছাত্রলীগ নেতা তসলিম হোসাইন তাজ তার ফেসবুকে আলিফের তোলা শেষ সেলফির ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন- । । । । । আমরা শোকাহত । । । । ।

‘ভাই জীবনেও ভাবিনি এটাই হবে আপনার শেষ যাত্রা। কিম্বা, মাত্র ৬ ঘন্টা আগে তোলা আপনারই শেষ ছবি। সত্যি, বাকরুদ্ধ ভাই’।

জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাঈদ মো. আবু সাঈদ খান ফেসবুকে লিখেছেন- নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি, প্রিয় ভাই আলিফুজ্জামান এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া খুব কষ্টদায়ক। মহান আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন। আমিন।

আলিফের অকাল মৃত্যুতে তার বন্ধু, রাজনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষী ও স্বজনরা শত শত শোক বার্তা জানাচ্ছেন তাদের ফেসবুকে পেজে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা,  মার্চ ১২, ২০১৮
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।