ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাবার ড্যামের ছোঁয়ায় বদলেছে কৃষকের জীবন 

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৮
রাবার ড্যামের ছোঁয়ায় বদলেছে কৃষকের জীবন  ৩ রাবার ড্যাম নির্মাণে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার এলাকার আত্রাই নদীর পানি ধরে রাখা হয়েছে। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দেশে চাষাবাদের উপর নির্ভর করে অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার মান। চাষাবাদের অন্যতম জেলা দিনাজপুরের সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর ফসলি ক্ষেত পানি অভাবে পড়ে থাকতো। 

খড়া মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির  স্তর বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ অভাবে অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকতো কৃষকের হাজার হাজার হেক্টর জমি। খড়া মৌসুম এলেই ওইসব এলাকার নদ-নদী ও পুকুর-দীঘিগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে যেতো।

স্থানীয় নদীগুলোতে পানি না থাকার কারণে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহকারী কয়েকশ জেলে পরিবার নিয়ে অনাহারে দিনাতিপাত করতেন।

এ পরিস্থিতে সরকার গত ২০১১ সালে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও স্থানীয়দের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে দিনাজপুর জেলার মোহনপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় আত্রাই নদীর উপর কৃষি মন্ত্রণালয় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই বছর নির্মাণ কাজ চলে। যা ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। একশ’ ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য এ রাবার ড্যামটি বয়ে আনে এলাকার দরিদ্র মানুষের আনন্দ। একশ’ ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাবার ড্যাম নির্মাণ।  ছবি: বাংলানিউজ রাবার ড্যামের কারণে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার এলাকার আত্রাই নদীর পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়। যার কারণে খড়া মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করতে কোনো অসুবিধা হয়না। প্রতিবছর থাকে অতিরিক্ত জমিতে চাষ ও উৎপাদন। এতে কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত হয় ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার লক্ষে এক ধাপ এগিয়ে যায় দেশ।  

স্থানীয় জেলেরা বছরজুড়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ ও এ অঞ্চলের মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন।  

দেশের এ সর্ববৃহত্ত রাবার ড্যাম দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পূর্বে ও আত্রাই নদীর উপর মোহনপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। দেশের সর্ববৃহত্ত রাবার ড্যামটি জেলার দুই উপজেলার নয় ইউনিয়নের কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে গেলো সব এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। মরুকরণের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। কৃষক পাচ্ছেন সেচ সুবিধা। উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় হাজার হাজার মেট্রিক টন খাদ্য শস্য। একশ’ ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাবার ড্যাম নির্মাণ।  ছবি: বাংলানিউজদিনাজপুর সদর উপজেলার আট নম্বর শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাহাক চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, আত্রাই নদীর উপর দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম নির্মাণ হওয়ায় সদর উপজেলার শংস্করপুর, শেখপুরা, ফাজিলপুর, শশরা, উথরাইল ইউনিয়ন ও চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতারা, আব্দুলপুর, ভিয়াইল, আউলিয়া পুকুর ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। এতে উপকৃত হয়েছে দুই উপজেলার হাজার হাজার পরিবার।  

খড়া মৌসুমে এ রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় সেচ সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে বছরে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় সাড়ে সাত হাজার টন বাড়বে। এতে বছরে কয়েক কোটি টাকা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।

এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পানিতে মাছ চাষ ও শিকার করার সুযোগ হয়েছে।  

দিনাজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি)নির্বাহী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আত্রাই নদীর উপর মোহনপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম নির্মাণ হওয়ার পর অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই কৃষকরা পাচ্ছেন সেচ সুবিধা।  

কৃষকের পড়ে থাকা অনাবাদি জমিতে বর্তমানে খড়া মৌসুমেও চাষাবাদ চলছে। কৃষক ও স্থানীয়রা হচ্ছেন স্বাবলম্বী। অবসর জেলেরা বছরজুড়ে মাছ চাষ ও শিকার করার সুবিধা পাচ্ছেন। ওই রাবার ড্যাম স্থানীয় কৃষকদের জীবনযাত্রার মান বদলে দিয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগেও।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।