ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে মিল নেই বিদ্যুৎ বিলের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে মিল নেই বিদ্যুৎ বিলের! বিদ্যুৎ বিলের কপি

বগুড়া: মিটারের চাকা ঘুরে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারিতে স্থির ছিল ৯ হাজার ৩৯৫ ইউনিটে। ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর মিটারের চাকা ৯ হাজার ৩৯৫ ইউনিটে স্থির ছিল। সে হিসেবে গ্রাহক শূন্য ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু গ্রাহকের হাতে ডিসেম্বর বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৯৩ টাকা।

একই গ্রাহকের মিটারের চাকা ঘুরে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে স্থির থাকে ৯ হাজার ৮৯৫ ইউনিটে। আর আগের ইউনিট ছিল ৯ হাজার ৩৯৫ ইউনিট।

সে হিসেবে গ্রাহক জানুয়ারি মাসে ৫শ’ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৩০ টাকার বিল।
 
গ্রাহকের নাম মো. গোলাম রব্বানী। বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সাধুবাড়ী গ্রামে। পেশায় তিনি একজন কৃষক। স্বভাবতই তার একটি অগভীর নলকূল রয়েছে। বিদ্যুৎ চালিত এ নলকূপের সাহায্যে তিনি তার জমিতে সেচ কাজ পরিচালনা করেন। এ গ্রাহকের বিল নম্বর ২৯৭৩৩৭২।
 
আর প্রত্যেক মাসে ভুতুড়ে বিল পরিশোধ করতে এ গ্রাহকের হাতে কাগজ ধরিয়ে দেয় নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের বগুড়ার শেরপুরস্থ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর কর্তৃপক্ষ।
 
বিগত কয়েক মাস ধরে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের সঙ্গে একই ধরনের অনিয়মের কাজটি করে আসছে সংশ্লিষ্টরা। প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগীদের বারবার সংশ্লিষ্টদের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তে হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া মিলছে না সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে- অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর। উল্টো গ্রাহকদের বিল দেয়া ও আদায়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
বিদ্যুৎ বিলের কপিমেসার্স যমুনা সেমি অটোরাইস মিলের মালিক আব্দুল জব্বার বাংলানিউজকে জানান, গত ডিসেম্বর মাসে বিল পরিশোধ করেছেন ৭০ হাজার ৪০১ টাকা। গত মাসের তুলনায় জানুয়ারি মাসে মিল কম চলেছে। যা মিটারের রিডিংয়ে স্পষ্ট করে লেখাও রয়েছে। অথচ জানুয়ারি মাসে বিল করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৪৩ টাকা। মিটার না দেখেই এ কাজটি করেন বিদ্যুৎ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন।
 
তিনি জানান, পরবর্তী পর্যায়ে ভুল ধরে দিলেও ওই কর্মকর্তা সঠিক আছে বলে তাকে বারবার ফিরে দেন। শেষ মেষ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্বাহী প্রকৌশলী গোপাল চন্দ্র সাহা সে ভুল সংশোধন করে ৩৬ হাজার ৭৪৩ টাকা কমিয়ে ৭০ হাজার টাকা নতুন বিল করে দেন।
 
একই অভিযোগ করে বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকূপের মালিক কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, গত ডিসেম্বর মাসে তার ১শ’ ইউনিটের বিল করা হয়েছে। অথচ জানুয়ারি মাসে ৯শ’ ইউনিটের বিল করা হয়েছে। যা মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে মিল করে করা হয়নি। ভুল সংশোধন করতে গেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান বলেও অভিযোগ করেন গ্রাহক রফিকুল ইসলাম।
 
তাদের মতো একাধিক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুৎ ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ছে না। এরপরও ঘুরছে মিটারের চাকা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মিটারের ডিজিটগুলো। তবে বাস্তবে না। হাতের মারপ্যাঁচে করা হচ্ছে এ কাজটি। ইচ্ছেমতো বিল কষে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ বিলের কপি।
 
সে বাড়তি বিল পরিশোধে বাধ্য করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এ অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে বেশ কয়েকমাস ধরে। কিন্তু বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং অনিয়ম-দুর্নীতি চালু রেখে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল আদায়ে সংশ্লিষ্টরা তৎপর বলে অভিযোগ করেন তারা।
 
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের বগুড়ার শেরপুরস্থ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোপাল চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে জানান, বাড়তি বিল নিয়ে গ্রাহকদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। এমনটা হলে পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে তা ঠিক করে দেয়া হবে।
 
গ্রাহক বাড়তি বিল কেন দেবে- এমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে যান বিদ্যুৎ বিভাগের এ নির্বাহী প্রকৌশলী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
মবিএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।