ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ছেলে নেই, শান্তি দিতে পারে না কোনোকিছু’

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
‘ছেলে নেই, শান্তি দিতে পারে না কোনোকিছু’ ছেলের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে কহিনূর বেগম/ছবি: বাংলানিউজ

বনানী সামরিক কবরস্থান থেকে: কবরের নামফলকে লেখা মেজর মিজানুর রহমান। নিজের শরীরের ভার সইতে না পারলেও দাঁড়ান ছেলের কবরের পাশে। সত্তরোর্ধ্ব কহিনূর বেগম দোয়াও পড়েন। অঝর ধারায় গাল বেয়ে তখন নামছে অশ্রুধারা। যেন গোটা পৃথিবী কাঁদছে তার সঙ্গে!

সমবেত সুধীজনের চোখও তখন ছলছল। অনেকেই ফেললেন দীর্ঘশ্বাস।

অনেককেই ইতিউতি করছেন আবেগ সংবরণে। বেশ কিছুক্ষণ পর সরে এলেন কবরের সামনে থেকে।  

বাংলানিউজকে ভাঙা কণ্ঠে বলেন, সরকারের তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতা পেয়েছি। টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি দিয়ে তো মায়ের মন থেকে সন্তান হারানোর শোক দূর হয় না। ছেলে নেই, আমাকে শান্তি দিতে পারে না কোনো কিছু। বিপথগামী ওই হত্যাকারী জওয়ানদের বিচার চাই। দ্রুত রায় কার্যকর হোক সেটাই চাই।

সঙ্গে ছিলেন নিহত মেজরের দুই সন্তান মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র তাহসিন রহমান ও ফারদিন রহমান সানি। তাহসিন বলেন, আমি তখন ছোট ছিলাম। বাবা পিলখানায় ছিলেন। মা রেবেকা ফারাহানা গত নয়মাস আগে ব্রেন স্টোক করে মারা গেছেন।

ঘটনার দিন জেনারেল শাকিল আহমেদ বিডিআরের ডিজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী মিসেস নাজনীন শাকিলকেও বিপথগামী জওয়ানরা নির্মমভাবে হত্যা করে। নাজনীন শাকিলের বড় ভাই আহমেদ সালাহ উদ্দিন শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে কাঁদছিলেন। স্বজন হারানোর কষ্ট যেন তার মনে এখনো দগদগে ঘায়ের মতোই পীড়া দেয়।

বাংলানিউজকে বলেন, বোন আর বোন জামাইকে তো আর কোনোভাবেই ফিরে পাবো না। এটা অপূরণীয় ক্ষতি। যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কেবল তিনিই বুঝতে পারবেন। আমাদের আর কিছু চাওয়া নেই। বিচারের রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর জওয়ানরা বিদ্রোহ করে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, একজন সিপাহী এবং তাদের বেশকিছু স্বজনকে হত্যা করে। পরবর্তীতে সে হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হলেও দণ্ডপ্রাপ্তরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। আপিলের রায় এখনো হয়নি।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহতদের কবরে প্রথমেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী ইফতেখারুল আলম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এছাড় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে শ্রদ্ধা জানান নিহতের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
ইইউডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।