ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পিলখানা ট্রাজেডির ৯ বছর

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
পিলখানা ট্রাজেডির ৯ বছর পিলখানা ট্রাজেডি (ফাইল ছবি)

ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় একটি দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি। ২০০৯ সালের এই দিনে রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) দরবার হলে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে কিছু পথভ্রষ্ট বিডিআর সদস্য। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী বিডিআরের ব্রিদ্রোহী সদস্যদের এ হামলায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ নিহত হন ৭৪ জন।

এদিকে, নয় বছর পার হলেও পিলখানা ট্রাজেডির বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। সরকারের প্রতিশ্রুতির অন্যান্য সুবিধা পেলেও দীর্ঘদিনে দোষীদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ার আক্ষেপ তাদের কথায়।

এছাড়া দিনটিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের ওপর হাইকোর্ট গত নভেম্বরের ২৬ ও ২৭ তারিখে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর মধ্যে ১ জন মারা গেছেন। বাকি ১২ জনের মধ্যে ৮ জনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও অন্য চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

প্রায় তিন মাস আগে দেওয়া এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর আপিল করবে বলে জানিয়েছে উভয়পক্ষ।

বিদ্রোহীদের বাধা দিতে গিয়ে বিডিআরের একমাত্র সদস্য হিসেবে শহীদ হন নুরুল ইসলাম। তার ছেলে আশরাফুল হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, দ্রুততার সঙ্গে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে দোষীদের রায় যেন কার্যকর হয়, শহীদ পরিবার হিসেবে এটাই আমাদের চাওয়া। এছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে আমরা শহীদ সেনা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই।

সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেলেও পরিবারটি এখনো প্লট পাননি। আশরাফুল হান্নান আরো বলেন, নিহত ৫৭ সেনা সদস্যের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবেই ৪ কাঠা করে জমি দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা যেহেতু বিডিআরে ছিলেন, সেহেতু আমাদের এ বিষয়টি দেখে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত পাঁচ বছর ধরে বিজিবি, স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করেও আমাদের প্লট পাওয়ার বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

ওই ঘটনায় নিহত মেজর মো. মমিনুল ইসলাম সরকারের স্ত্রী সানজানা সোনিয়া বলেন, দেখতে দেখতে ৯টি বছর কেটে গেলো। প্রতি বছর একই কথা বলতে বলতে আমি বিরক্ত। দোষীদের ফাঁসি দেখতে পারিনি। ঘটনার পর রাষ্ট্রের কাছ থেকে হয়তো অনেক কিছু পেয়েছি, কিন্তু হৃদয়ের ক্ষত তো আর যায়নি।

আদালতে প্রত্যক্ষদর্শী অফিসার ও সৈনিকদের জবানবন্দিতে সেদিনের ভয়াবহ চিত্রের বর্ণনা পাওয়া যায়। জানা যায়, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ৯টার কিছু পর দরবার হলে প্রবেশ করে মঞ্চে বসেন ডিজি শাকিল আহমেদ। সাড়ে ৯টার দিকে শাকিলের বক্তব্য চলাকালীন সিপাহি মাঈন মঞ্চে উঠে ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করেন। ডিজির চোখের দিকে তাকিয়ে সৈনিক মাঈন মঞ্চে অজ্ঞান হয়ে যান। তখনই ভেতরে শুরু হয় গোলাগুলি। প্রায় তিন হাজার সৈনিক এবং জিসিও মুহূর্তের মধ্যে যে যেভাবে পেরেছে জানালা বা দরজা দিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে যায়।

ডিজি, ডিডিজি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ ৪৫-৫০ জন দরবার হলে অবস্থান করে আলোচনা করতে থাকেন। অন্যদিকে সিপাহীরা বাইরে গিয়ে নিজেদের সংগঠিত করে। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে দেখা যায় লাল সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিডিআরের একদল সৈনিক দরবার হল ঘিরে গুলি চালানো শুরু করেছে।

ডিজি তখনো সমাধানের পথ খুঁজছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ফোনে সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাতে অনুরোধ করছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্রোহী সৈনিকরা চিৎকার করে কর্মকর্তাদের মঞ্চের ভিতর থেকে বের হতে বলে। তখন মঞ্চের নিচে ১৫-১৬ জন বিদ্রোহী কাপড়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিল।

দরবার হলের মঞ্চের পর্দার আড়ালে উত্তর দিকে ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। বিদ্রোহীরা হ্যান্ডমাইকে বলছিল, ‘ভিতরে কেউ থাকলে বের হয়ে আসেন। ’ মুখে কাপড় বাঁধা একজন সৈনিক অস্ত্রহাতে পর্দা সরিয়ে মঞ্চে ঢুকে চিৎকার করে বলে, ‘ভিতরে কেউ আছেন? সবাই বের হন। ’ একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে দুটি গুলি করে সে।

এরপর ডিজিসহ একে একে অন্য কর্মকর্তারা পর্দা সরিয়ে বাইরে আসেন। মঞ্চের নিচে নেমেই কর্মকর্তারা ডিজি শাকিলকে মধ্যে রেখে গোল হয়ে দাঁড়ান। একজন সৈনিক চিৎকার করে অশালীন ভাষায় তাদের সিঙ্গেল লাইনে দাঁড়াতে বলেন। এরপরই একে একে হত্যা করা হয় তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।