ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আঙ্গো রেডিও আঙ্গো কথা কয়’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
‘আঙ্গো রেডিও আঙ্গো কথা কয়’ কমিউনিটি রেডিওর ‘সাগর দ্বীপ’ স্টুডিও /ছবি: বাংলানিউজ

নোয়াখালী (হাতিয়া) থেকে: দুর্যোগে লড়াই করা উপকূলবাসী, কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, সুবিধাবঞ্চিত নারী অথবা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। প্রান্তিক সব জনগোষ্ঠীর কণ্ঠ রেডিওতে। তাদের চাওয়া-পাওয়া নিজেরাই প্রকাশ করছেন এ রেডিওর মাধ্যমে।

তারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে সুবিধাও পাচ্ছেন এ রেডিও থেকে। এ কারণেই অল্প সময়ে বাংলাদেশে যেমন জনপ্রিয় তেমনি কার্যকর হয়ে ওঠেছে কমিউনিটি রেডিও।

বাংলাদেশে সম্প্রচারিত কমিউনিটি রেডিও সেন্টারগুলোর মধ্যে অন্যতম নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ‘সাগর দ্বীপ’ রেডিও। তৃণমুল মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেছে এ রেডিও। এ জন্যই রেডিওটির স্লোগান ‘আঙ্গো রেডিও আঙ্গো কথা কয়’ (আমাদের রেডিও আমাদের কথা বলে)।

তথ্য প্রচার আর স্থানীয় মানুষদের ভাব বিনিময় সমুদ্রোপকূলবর্তী জনগোষ্ঠীকে বিপন্নতা থেকে বাঁচাতে দারুণ ভূমিকা রাখছে রেডিওটি।

রেডিও সাগর দ্বীপের ব্যাপারে কথা হয় ফোকাল পারসন শামছুততিব্রিজের সঙ্গে। তিনি জানান, দুর্যোগ প্রশমন ও টেকশই জীবিকা উন্নয়নই রেডিও সাগর দ্বীপের লক্ষ্যমাত্রা। এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনপদের কণ্ঠ সবার মধ্যে তুলে ধরা হচ্ছে।

রেডিওটিতে গুরুত্বের সঙ্গে সম্প্রচারিত হচ্ছে পরিবেশ, জলবায়ু, আবহাওয়া, কৃষি, শিক্ষা, নারী স্বাস্থসহ বিনোদনের নানা বিষয়। তাই প্রান্তিক জনপদের মানুষের আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রেডিওটি।

দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার নুসরাত হায়দার ইমা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকিতে থাকা দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিপদাপন্ন মানুষদের তথ্য নেটওয়ার্কের আওতায় আনতেই এমন রেডিও স্টেশনটির প্রতিষ্ঠা।

রেডিও স্টেশনটির সহকারী অনুষ্ঠান প্রযোজক ফেরদৌস বেগম জানান, দ্বীপের বিচ্ছিন্ন জনপদের মানুষদের কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্তের মধ্যদিয়ে দেশে কমিউনিটি রেডিও ভিন্ন মাত্রা যোগ করাছে ‘সাগর দ্বীপ’।
কমিউনিটি রেডিও ‘সাগর দ্বীপ’ /ছবি: বাংলানিউজ
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রাণকেন্দ্র ওছখালীতে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত রেডিওটির মূল স্টেশন। তারাই পরিচালিত করছে স্টেশনটি।

আরেক সহকারী অনুষ্ঠান প্রযোজক আজগর হোসেন জানান, এর মাধ্যমে দুর্যোগের সময় তথ্য বিনিময় হচ্ছে। কেন্দ্রের আবহাওয়া বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে। এছাড়া দ্বীপের মানুষের বিনোদনের খোরাকও মিটাচ্ছে ‘সাগর দ্বীপ’।

দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার নুসরাত হায়দার জানান, দুর্যোগের সময় ‘সাগর দ্বীপ’-এর তথ্য বিনিময় চালু রাখতে সাহায্য করছে সৌরবিদ্যুতে রিচার্জ হওয়া শক্তিশালী ব্যাটারি প্রত্যেক টাওয়ারের সঙ্গে সোলার প্যানেল ছাড়াও ব্যাটারি বসানো রয়েছে। এ ব্যাটারি বিদ্যুৎবিহীন কমপক্ষে ১৫ দিন ধরে রেডিওর কার্যক্রম চালিয়ে রাখতে সহায়তা করছে।

দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম বলেন, উপকূলের এ জনপদটির মানুষের কথা বলার ঠিকানা রেডিও ‘সাগর দ্বীপ’। এর মাধ্যমে তৃণমূলের কথাগুলো কেন্দ্রে পৌঁছেছে। এ জনপদের দুর্যোগ প্রশমন ও টেকশই জীবিকা উন্নয়নে এ রেডিও স্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি জানান, গ্রামের পাড়া-মহল্লার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ‘সাগর দ্বীপ’-এর একদল দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক। তাদের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদের মানুষদের কণ্ঠস্বর উঠে আসছে রেডিওতে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু বার্তা দেওয়া-নেওয়াই নয়, প্রত্যন্ত এলাকার তরুণদের প্রতিভা বিকাশেও দারুণ ভূমিকা পালন করছে এ কমিউনিটি রেডিও। যেকোনো দুর্যোগের সময় রেডিও স্টেশনের খবরে সচেতন হয়ে উঠতে পারেন তারা।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর থেকে পথচলা শুরু করে দেশের ১৫ তম কমিউনিটি রেডিও স্টেশনটি আজ অব্দি সুনামের সঙ্গে পথ চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
এসএইচডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।