ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অযত্ন-অবহেলায় সিরাজগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
অযত্ন-অবহেলায় সিরাজগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার অযত্ন-অবহেলায় সিরাজগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের পরের বছরই সিরাজগঞ্জে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন ভাষা সংগ্রামীরা। ১৯৫৩ সালেই প্রতিষ্ঠা হয় তৎকালীন মহুকুমা শহর সিরাজগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার। 

১৯৫৩ সালে প্রথম শহীদ দিবসে এ শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে পাকিস্তান সরকারের পুলিশের হাতে বন্দি হন অনেক ভাষা সৈনিক। এমন ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শহরের প্রথম শহীদ মিনারটি পড়ে রয়েছে নানা অযত্ন-অবহেলায়।

 

সরেজমিনে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ শহরের ইবি রোডে অবস্থিত শহীদ মিনারটির বেহাল দশা। শহীদ মিনারের জরাজীর্ণ বাউন্ডারি ওয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দোকানপাট। এসব দোকানপাটের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহীদ মিনারের পাদদেশে। ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েকটি গরু। পার্কিং করে রাখা হয়েছে মোটরসাইকেল। সামনে বসেছে মাছের বাজার।  

স্থানীয়রা জানান, ২০১১ সালের আগে এই শহীদ মিনারেই জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজার স্টেশন এলাকায় গড়ে তোলা হয় মুক্তির সোপান শহীদ মিনার। এরপর থেকে প্রতিবছর মুক্তির সোপানেই শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দেওয়া হয়। ফলে ইবি রোডের জেলার প্রথম শহীদ মিনারটি গুরুত্ব হারায়। এর কারণে এ শহীদ মিনারটির সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।  

ভাষা সৈনিক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রতু শহরের প্রথম শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ভাষা শহীদদের স্মরণে ওই সময় ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মশিউর রহমান টিংকু ওরফে আজিজ মেহের, নুরুন্নবী খান, তমিজুল ইসলামসহ সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে বিড়ি ও রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা এ শহীদ মিনারটি স্থাপন করেন। যার উদ্বোধন করা হয়েছিল ৬ বছরের শিশু জিন্নাত আলীকে দিয়ে।

এটি নির্মিত হওয়ার পর ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ফুল দিতে যাই আমরা। ফুল দিতে গেলে পাকিস্তানী পুলিশ আমাকেসহ আব্দুর রশিদ নান্নু, আব্দুল হান্নান তালুকদার, সৈয়দ কায়সার আলী, মফিজ উদ্দিন তালুকদার, জাফর ইমাম ভোলা ও নির্মল বসাকসহ বেশ কয়েকজন ভাষা সংগ্রামীকে গ্রেফতার করে।  

তিনি আরও বলেন, এ শহীদ মিনারটির অনেক ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। বর্তমানে মুক্তির সোপান শহীদ মিনারটিতে শ্রদ্ধা জানানো হলেও এ শহীদ মিনারটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি।  

জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা এ শহীদ মিনারটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে জেলা বাসদের আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার বলেন, এটি এখন আবর্জনায় ভরে গেছে। ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে এটিকে দ্রুত সংস্কার জরুরি।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ সবুজ বলেন, ভাষা শহীদরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা বাংলায় কথা বলতে পারছি। ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাদের স্মরণে রাখতে জেলা শহরের প্রথম শহীদ মিনারটিকে সংস্কার করে সেখানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে।  

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে মুক্তির সোপানেই ফুল দিয়ে আসছি। তবে শহরের প্রথম শহীদ মিনারটি সংস্কার করা জরুরি। পৌরসভার পক্ষ থেকে সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই ওই শহীদ মিনারটি সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি সেখানে ভাস্কর্য স্থাপন ও ফুলের বাগান তৈরি করে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ গড়ে তোলা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮ 
আরএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।