ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাষ্ট্রীয় সম্মাননা চান ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
রাষ্ট্রীয় সম্মাননা চান ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা

মাদারীপুর: ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে উত্তাল রাজধানীর রাজপথ। গোলাম মোস্তফা আকন্দ তখন বরিশাল বিএম কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্র।

মুক্তিকামী, সংগ্রামী মনোভাবের অধিকারী গোলাম মোস্তফা মাদারীপুর থেকে সেসময় ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র-তরুণ নিয়ে মাদারীপুর থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছান ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোরে।

সদরঘাট থেকে মিছিল নিয়ে পৌঁছান ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে। একাত্মতা ঘোষণা করেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে।

মাতৃভাষা বাংলার জন্য রাজপথে আন্দোলনকারী শিবচর উপজেলার সেই গোলাম মোস্তফার জীবন কাটছে এখন নিভৃতে, রোগে-শোকে। শয্যাশায়ী এ ভাষা সৈনিকের খোঁজ নিতে আসেনি কেউ। বুক ভরা আক্ষেপ নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

সরেজমিনে শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চর রামরায়ের কান্দি গ্রামে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায় শয্যাশায়ী এ ভাষা সৈনিককে। ২০০৮ সালে ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে গেছে।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ, ৫২’র ভাষা আন্দোলনে গ্রাম থেকে গিয়ে রাজপথে আন্দোলন, ৭১’এ স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা সৈনিক সারাজীবন উপেক্ষিতই রয়ে গেছেন। ভাগ্যে জোটেনি একটু সমাদর, রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা বা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব।
 
জীবন সায়াহ্নে এসে এখন একটুখানি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা চান তিনি। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক ভাগ্যে জুটলে শান্তি পেতেন গোলাম মোস্তফা আকন্দ।
 
ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা আকন্দ জানান, ‘শিবচরের তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় নেতা রমনীমোহন চক্রবর্তীর বিশ্বস্ত লোক ছিলেন তিনি। ওই সময় তাকে ২০ দিনের মতো কারাবরণও করতে হয়েছিল।

ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা ও তার পরিবার১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বরিশাল বিএম কলেজে বিএ ক্লাসের ছাত্র তিনি। এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও বরিশাল অঞ্চলের প্রায় ৩ শতাধিক ছাত্র-তরুণ নিয়ে লঞ্চে করে ঢাকা পৌঁছান তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় যান।

৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে স্থানীয়ভাবে কালমৃধা পোদ্দার বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। সেসময় স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন।

ব্যক্তি জীবনে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক তিনি। ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে চাকরি করেছেন উপজেলার ভদ্রাসন জেসি একাডেমি ও উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে (তৎকালীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে)।

ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফার তৃতীয় ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় গ্রাম থেকে যাওয়া পুরো মিছিলের নেতৃত্ব দেন বাবা। এ কথা মনে হলেই গর্বে বুকটা ভরে উঠে আমাদের। পুলকিত হই একজন ভাষা সৈনিকের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে পেরে।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু আক্ষেপেরও শেষ নেই। এই মহান ভাষা সৈনিকের মূল্যায়ন কেউ করেনি। সরকারি কোনো সম্মাননা তিনি এ পর্যন্ত পাননি। তবে ২০১২ সালে বেসরকারি সংগঠন ‘এইম ওয়ে কর্পোরেশন লিমিডেট’ বাবাকে সম্মাননা দিয়েছিল। সে সময় ৫০ হাজার টাকার চেক দিয়েছিলেন তারা। সম্মাননা বলতে এতটুকুই।

প্রায় ১০ বছর ধরে শয্যাশায়ী এই ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা আকন্দ’র আকুতি রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননার। সরকারিভাবে তাকে সম্মান জানাতে আসুক কেউ।  

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই আমরা ২১শে পদক মনোনয়ন প্রাপ্তির তালিকা হিসেবে তার নাম পাঠাই। আমাদের প্রত্যাশা মহান এ ভাষা সৈনিক যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।