ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

১২০ ফিটের রাস্তা এখন ২০ ফিট!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
১২০ ফিটের রাস্তা এখন ২০ ফিট! ভাষানটেকে গড়ে উঠা একাধিক বস্তির বাসিন্দা। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: মিরপুর ১৪ নম্বর মোড় থেকে ভাষানটেক বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের রাস্তাটির ১২০ ফিট প্রশস্ত কাগজে কলমে। রাস্তার মাপ কাগজে কলমে ১২০ ফিট থাকলেও সরেজমিনে কোথাও রয়েছে ৩০ ফিট কিংবা ২০ ফিট। রাস্তাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। অবৈধ দখলে রাস্তাটি ২০ ফিটে পরিণত হওয়ার বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে।

দখল হওয়াতে সড়ক ও ফুটপাত না থাকায় স্থানীয় ও পথচারীদের মূল সড়কে নেমে হাঁটতে হচ্ছে। এছাড়া এমনভাবে দখল করা হয়েছে যে দু’টি মিনিবাসও রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করতে পারে না।

বাঁশ, কাঠ, লোহা, টিন, ফার্নিচার ও ওয়ার্কশপসহ এমন কোনো দোকান নেই যে রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেনি। এভাবে প্রায় দুই হাজার দোকান গড়ে উঠেছে। তাছাড়া রাস্তাটিতে অবৈধ দখলের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ড, বেশ কয়েকটি গ্যারেজসহ কাঁচাবাজার। ভাষানটেকে গড়ে উঠা একাধিক বস্তির বাসিন্দা।  ছবি: জিএম মুজিবুরসোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর-১৪ নম্বর সেকশনের মোড় থেকে ভাষানটেক বাজার পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তাটির দু’পাশে রয়েছে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বসান কেন্দ্র (সিআরপি), জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল ও হাসপাতাল, জাতীয় জরিপ অধিদফতর, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমিসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান। রাস্তাটি দখল হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের গাড়ি বা হেঁটে আসতে অফিসে গেলেও পরতে হচ্ছে বিড়ম্বনায়।

অন্যদিকে দেখা যায়, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকের ঠিক উল্টো পাশে সৈকত প্লাজা নামে একটি মার্কেটের সামনে ফুটপাত দখল করে প্রায় ২-৩ শ ফুট লম্বা একটি কাঁচাবাজার গড়ে উঠছে। ভাষানটেকে গড়ে উঠা একাধিক বস্তির বাসিন্দা।  ছবি: জিএম মুজিবুরএদিকে কাঁচাবাজারটির সামনেই রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে কাকলি-মিরপুর ১৪ নম্বর পথে চলাচলকারী মিনিবাসস্ট্যান্ড। ফলে এই অংশে রাস্তার ১৫ ফিট দখলমুক্ত আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানায়, এই কাঁচাবাজারে যাদের দোকান রয়েছে তারা সবাই ভাষানটেকে গড়ে উঠা একাধিক বস্তির বাসিন্দা। এ বাজারের মূলক্রেতাও  আর এই বস্তিবাসীদের দিয়েই বিভিন্ন দোকানপাট খুলিয়ে রাস্তা দখল করে চলছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী চক্র। তাদের কৃতকর্মের কারণে ওই রাস্তা এখন ২০ ফিট হয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ রাস্তা দখল করে শুধু দোকানপাটই গড়ে উঠেনি। গড়েছে একাধিক রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। অনেক স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এসব দলের কার্যালয় থেকেই অবৈধ দখলের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ হয়।

ভাষানটেকের স্থানীয় বাসিন্দা আবু হানিফ বাংলানিজকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে ভাষানটেক এলাকার বস্তির বাসিন্দারা ও পুর্নবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা। আর তারাই রাস্তা দখল করে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। রাস্তাটি চলাচল অযোগ্য তারাই করছে। এটি রাস্তা নয়, মনে হয় একটি বাজার। ভাষানটেকে গড়ে উঠা একাধিক বস্তির বাসিন্দা।  ছবি: জিএম মুজিবুরকাঁচাবাজারের দোকানি ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বস্তিতে থাকি। এ বাজার-দোকানপাট আমাদের বাঁচার একমাত্র সম্বল। তাই এটা সবাই বুঝে। এজন্য আমাদের উচ্ছেদও করে না।

কাঁচাবাজারটি সামান্য এগোলেই জাতীয় জরিপ অধিদফতর ও সরকারি হোমিওপ্যাথিক কলেজ। দু’টি প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকের সামনেই গড়ে উঠছে পুরোনো লোহালক্কড় বিক্রির দোকান ও রিকশার গ্যারেজ।  

প্রতিষ্ঠান দু’টিতে নিয়মিত অফিস করতে আসা কর্মকর্তারা বলেন, ফুটপাত ও রাস্তা না থাকায় তাদের অফিসে আসতে অনেক বিড়ম্বনা হয়। রাস্তাটিতে দ্রুতগতিতে কোনো গাড়ি যাওয়ার সময় তাদের মনে হয় এ বুঝি গায়ে ধাক্কা লাগবে। তখন জীবন বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে এসব দোকানে আশ্রয় নিতে হয় তাদের।

রাস্তাটি দখলের বিষয়ে ডিএনসিসির ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সালেক মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ডিএনসিসির অবহেলার কারণে রাস্তাটি এখন ২০ ফিটে পরিণত হয়েছে। দখল উচ্ছেদ করতে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি বিভাগে তিনবার আবেদন জানিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে অভিযানের দিনক্ষণ ঠিক করেও চালানো হয়নি।

এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
এমএসি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।