ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সৌন্দর্যহানির ‘পোস্টার বয়’ সাইফুদ্দিন মিলনকে থামাবে কে?

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
সৌন্দর্যহানির ‘পোস্টার বয়’ সাইফুদ্দিন মিলনকে থামাবে কে? রাজধানীর অলিগলিতে হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলনের পোস্টার সাঁটানো। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানীর যেদিকেই চোখ যাবে, দেখা যায় হাস্যোজ্জ্বল বা মুখের সামনে মাইক লাগানো নানা ভঙ্গিমায় রাজনীতিবিদদের পোস্টার। এলাকা ও উপলক্ষ্য ভেদে এ পোস্টারে আলাদা আলাদা মুখ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রম’ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন। হোক উত্তরা-খিলক্ষেত বা সদরঘাট-গুলিস্তানের অলিগলি, দোয়াল-ফটক, গাছপালা কিংবা বৈদ্যুতিক খুঁটি, সবখানেই তার মুখচ্ছবি সম্বলিত পোস্টার।

পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার অন্যতম অন্তরায় সাইনবোর্ড, পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার। এসব উপকরণে নগরীর সৌন্দর্যহানি হয় বিধায় বিভিন্ন সময়ে আদালতের নির্দেশনায় দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ব্যানার-পোস্টার সরিয়ে ফেললেও অবস্থা তথৈবচ।

সৌন্দর্য নষ্টে অন্যদের চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা দেখা যাচ্ছে সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলনের। নির্বাচন হোক আর অন্য কোনো উপলক্ষ, সারাবছর ধরে ‘পোস্টারবন্দি’ হয়ে হাসতে থাকেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন।

এ বিষয়ে পুরান ঢাকার এ রাজনীতিকের বক্তব্য, পোস্টার কেবল তিনিই লাগান না, অন্যরাও লাগান। যদিও নগরের রঙচঙা দেয়ালে এভাবে ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে সৌন্দর্যহানির কারণে অন্যদের পাশাপাশি মিলনের ওপরও চরম বিরক্ত সচেতন নগরবাসী।
 
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালবাগের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশ দিয়ে বকশীবাজার যাচ্ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী আমিরুল হক। বকশীবাজারে মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের দেয়ালে লাগানো পোস্টার দেখে বলে উঠলেন, ‘এই লোকটার পোস্টার নেই, ঢাকার এমন কোনো দেয়াল বা বাস দেখি নাই! দেখেন, পুরো বিল্ডিংয়ে কোনো পোস্টার নেই, তারটা আছে, বিচ্ছিরি লাগে না?’।

রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর কারণে ঘটছে সৌন্দর্যহানি।  ছবি: জিএম মুজিবুরকেবল বকশীবাজার নয়, রাজধানীর অভিজাত উত্তরা-বারিধারা থেকে শুরু করে পল্টন-মতিঝিল-গুলিস্তানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত প্রচারণা, সভা-সমাবেশের প্রচারণা ছাড়াও স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টারসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যানার-পোস্টারে সয়লাব অলি-গলি। এরমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে গণফ্রন্ট, হেযবুত তাওহীদের মতো অখ্যাত বা ভূঁইফোড় দল-সংগঠনের পোস্টারও রয়েছে।

তবে সবচেয়ে বেশি পোস্টার সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলনের। দেয়ালে দেয়ালে লাগানোর পাশাপাশি তার পোস্টার এমন উঁচুতে লাগানো হয়েছে যে, এসব সরাতেও বড় বড় মই লাগে। আবার দলীয় ব্যানারে টানালেও অধিকাংশ পোস্টারে বিশেষ জায়গা পায়নি তার দলীয় প্রধানের ছবি বা দলের লোগো। পোস্টারে হাসিমুখো মিলনই সর্বেসর্বা।
 
নগরীর সৌন্দর্যহানির দায়ে অনেকবার সাইফুদ্দিন মিলনকে সতর্ক করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই। পোস্টার লাগানোর দায়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। এরপরও নিষেধাজ্ঞা-মামলাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নগরজুড়ে পোস্টার সাঁটিয়ে রেখেছেন স্বয়ং মিলন ও তার সমর্থকরা।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় এগুলো লাগানো হয়েছিলো। আর নতুন করে লাগানো হয়নি। সব পোস্টার আমি নিজেই পৃষ্ঠপোষকতা করেছি। এ কারণে আমার ছবি লাগানো, যে স্পন্সর করে তার ছবি পোস্টারে থাকে। ’
 
ব্যানার-পোস্টারে সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞার পরও তার এই কার্যক্রমের বিষয়ে মিলন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাকে অনেকবার সর্তক করা হয়েছে। পোস্টার ওঠানোর নির্দেশ দিয়েছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি। আর পোস্টার তো সবাই লাগায়, আমি একা নই। দলের কর্মীরা লাগিয়ে থাকে। ’

সিটি করপোরেশন আইন-২০১২ অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দেয়াললিখন, পোস্টার ও সাইনবোর্ড লাগালে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড ভুগতে হবে। পোস্টারের মাধ্যমে যিনি সুবিধাভোগী, তার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা এম এ রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন  অপসারণ করি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নগরীর সৌন্দর্যহানির দায়ে অভিযুক্তদের জরিমানা ও শাস্তিও দেওয়া হয়। তারপরও কাউকে থামানো যায় না। ’
 
আওয়ামী লীগের পরিচয়ে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে সৌন্দর্যহানি করছেন অনেকে।  ছবি: জিএম মুজিবুরপোস্টার লাগানো নিরুৎসাহিত করতে ডিএনসিসির উদ্যোগ নিয়ে এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা যেখানে-সেখানে পোস্টার লাগানো বন্ধ করতে নগরীতে ১৯টি স্পটে ২০টি বোর্ড বসিয়েছি। যেখানে পোস্টার লাগাতে পারে, এ রকম মোট ৫২টি স্পটে পোস্টার বোর্ড বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাহলে হয়তো যত্রতত্র পোস্টার লাগানো কিছুটা বন্ধ হবে। ’

এছাড়া অনেক রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে নগরীর সৌন্দর্যহানির অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এ প্রধান কর্মকর্তা।
 
জাপা  নেতা সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলনের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি তো পোস্টার বয়, এমন উঁচুতে পোস্টার লাগান, আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নাগাল পান না। তার বিরুদ্ধে একটা মামলাও রয়েছে। এরপরও বিরত রাখা যাচ্ছে না। আরও কী শাস্তি রয়েছে, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এমসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।