ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাঙা রাস্তায় বেনারশি ব্যবসা লাটে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
ভাঙা রাস্তায় বেনারশি ব্যবসা লাটে খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগে পড়ে এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে লাফ দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের-ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: গত নভেম্বরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এক রকম থমকে আছে মিরপুরের বেনারশি পল্লির ব্যবসা। এতে আলো ঝলমলে বড় বড় শাড়ির দোকানের ঝকমারি রোশনাই থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন বেনারশিপ্রেমীরা, তেমনি পুরো বিক্রি মৌসুম ক্রেতাশূন্য ব্যবসায়ীরা।

ভাঙা রাস্তা আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) খোঁড়াখুঁড়িতে তৈরি ধুলার কারণে পারতপক্ষে কেউ আর ওইমুখী হন না। কেবলমাত্র এ রাস্তার কারণেই এবার শাড়ির ব্যবসা লাটে উঠেছে বলে মনে করছেন বেনারশি পল্লির ব্যবসায়ীরা।


 
মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের শুরুতে ১৮ নম্বর বাড়ির নিচতলায় বেনারশি পল্লির সবচেয়ে বড় শাড়ির দোকান ‘বেনারশি বিগ বাজার’। এই সড়কটি গিয়ে মিশেছে মিরপুর ১০ থেকে পূরবী, পল্লবী, মিরপুর ১২, কালশীমুখী মূল সড়কে। কিন্তু এ সড়ক চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। পুরনো রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত ভেঙে বড় বড় কংক্রিটের টুকরো ফেলে রাখা হয়েছে সবখানে। কোথাও কোথাও পড়ে আছে রাস্তার পাশে থাকা গাছের কেটে রাখা অংশ।

খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাসা-বাড়িতে প্রবেশেও বিড়ম্বনা-ছবি: জি এম মুজিবুর
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ রাস্তায় কাজ করছেন কিছু শ্রমিক। এদের কেউ করছেন রাস্তার কাজ, কেউ ফুটপাতের, কেউবা ড্রেন বা নর্দমার। এই ব্লকের অন্য রাস্তাগুলোর অবস্থাও সপ্তাহখানেক আগ পর্যন্ত এমনই ছিলো। এখন উন্নতি বলতে কেবল ফুটপাতের সীমানা ব্লক বসেছে, নর্দমার দেয়ালে পড়েছে সিমেন্টের প্রলেপ। রাস্তায় ফেলা হয়েছে ইটের খোয়া ও বালু। যদিও তা পায়ে হাঁটার উপযোগী হলেও যানবাহন চলাচলের মতো হতে প্রয়োজন রোলিংয়ের কাজ। আর ধুলায়িত পথে পায়ে হেঁটে পথ চলা দায়!
 
বেনারশি পল্লি ঘুরে দেখা যায়, বিশালাকৃতির আলো ঝলমলে দোকানগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ক্রেতাশূন্য অবস্থায়। প্রতিটি দোকানে কর্মচারীরা বসে অলস সময় পার করছেন গল্প-গুজব করে বা টেলিভিশন দেখে। অনেক দোকানের মহাজন আবার অর্ধেক কর্মীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন লোকসানের হার কমাতে।

একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, গেলো বছরের নভেম্বর থেকে মিরপুরের এ এলাকার সড়ক উন্নয়ন, নর্দমা ও ফুটপাত তৈরি কাজ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তখন থেকেই একইসঙ্গে পুরো এ ব্লকের সবগুলো রাস্তা খুঁড়ে, নর্দমা ও ফুটপাত ভেঙে চলাচলের অচল করে ফেলে এই কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই সময়ে মিরপুরের মূল সড়কে চলতে থাকে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। এতে পুরো বেনারশি পল্লি এলাকাই বলতে গেলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
 
‘ঢাকাই কাতান’ দোকনের স্বত্ত্বাধিকারি শরীফ হোসেন বলেন, সাধারণত শীতের মৌসুমটা বলতে গেলে বেনারশি পল্লির ঈদের মৌসুম। ঝড়-বৃষ্টি, গরম না থাকায়, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সারাদেশেই এ সময়টাকে বিয়ের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়। সব ধরনের মানুষের কাছে বিয়ের অন্যতম উপাদানই হলো এই মিরপুরের কাতান ও বেনারশি শাড়ি। এছাড়া বিয়ে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে উপহার হিসেবে বিতরণের জন্য জামদানি, বালুচুড়ি, ঢাকাই সিল্ক, মসলিনের জন্যও বিখ্যাত এখানকার দোকানগুলো। এ কারণে কেবল ঢাকাবাসীই নয়, সারাদেশের শাড়ি ক্রেতাদের পদভারে মুখর থাকে বেনারশি পল্লি।
 
কিন্তু এবারের ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। পুরো মৌসুম ভাঙা রাস্তা, মেট্রোরেল প্রকল্পের যানজট ও ধুলোজটের কারণে ক্রেতাশূন্য থেকেছেন বেনারশি পল্লির ব্যবসায়ীরা। বলতে গেলে দোকান ভাড়া, মোকামের ধার-দেনা, আর কর্মচারীদের বেতন বাকি পড়ে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠেছে।
 
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র নাম প্রকাশ না শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, কেবল রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নয়, মেট্রোরেলের কারণেও অনেকে এখন মিরপুরে যেতে চান না। তাই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অনেকাংশেই সত্য। তবে তাই বলেতো উন্নয়ন কাজ ফেলে রাখা যাবে না। এই অবস্থার উন্নতি হবে আগামী মাসের মধ্যেই। মার্চের মধ্যে এসব সড়কের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। এজন্যই হয়তো দ্রুত সব কাজ শেষ করতে সে সব রাস্তার কাজ করছে। এটাই ওখানকার সাময়িক এই দুর্ভোগের কারণ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
আরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।