ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বিয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবারেই গরিবের তুষ্টি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
বিয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবারেই গরিবের তুষ্টি! বিয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: সমাজের উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্ত যেই হোক,  সবার বিয়ে বাড়িতেই থাকে বিভিন্ন পদের খাবারের পসরা। আমন্ত্রিতরা এত পদের খাবার না খেতে পারায় অধিকাংশই থাকে উচ্ছিষ্ট।

অপরদিকে নিম্নবিত্ত মানুষগুলো কোনো রকমে আদপেটে খেয়ে বেঁচে থাকে,  এত পদের খাবারের প্লেট যাদের কাছে স্বপ্নের মত। কিন্তু আর্থিক অসংগতির কারণে সে স্বপ্ন কখোনোই পূরণ হয় না।

কিন্তু তাতে কি? গরিবের তুষ্টি হয় বিয়ে বাড়ির সে উচ্ছিষ্টেই। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার, শনিবার এমনই একটি হাট বসে ফেনী রেলস্টেশনের উত্তর পাশে।

এখানে বিকিকিনি হয় উচ্ছিষ্টের। বিয়ে অনুষ্ঠানের বাবুর্চিরা খাবারগুলো নিয়ে আসেন, আর গরিব মানুষগুলো সে খাবার কিনে নিয়ে সন্তানের মুখে তুলে দেয়। আর সন্তানরা একবেলা তৃপ্তির সঙ্গে খায়। তাদের স্বপ্ন পূরণ হয় পোলাও কোরমা খাওয়ার। বিয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার কিনতে মানুষের ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজশুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অন্য হাটের মত এখানেও চলে ক্রেতা-বিক্রেতার দরদাম। বিকেল ৫টার দিকে দেখা গেল বেশ শোরগোল। শতশত ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি। কেউ কিনছেন কেউ বা ঘুরে ফিরে দেখছেন।

দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল আসতে থাকে তখন আসতে থাকে পোলাও কোরমা আর মাছ মাংসের পোটলা। রীতিমত খাবারের পসরা সাজিয়ে দাম হাঁকান বিক্রেতারা। এখানে মিলে কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ, গরুর মাংস, পায়েসসহ বিয়ে বাড়ির সব ধরনের খাবার।

একেক পোটলা খাবার নেওয়া হয় ১'শ থেকে ১'শ ৫০ টাকা। শহরের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারের অনুষ্ঠিত বিয়ে গায়ে হলুদ কিংবা জন্মদিনসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবারেই জমে এ হাট। এসব অনুষ্ঠানের পরিত্যক্ত খাবার কাজ করে কিংবা কিনে এনে এখানে বিক্রি করে বাবুর্চি কিংবা স্টেশনের ভাসমান মানুষরা।

হাট ঘুরে দেখা যায়, এখানে ক্রেতা মূলত সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষেরা। কম দামে খাবার পাওয়া যায় বলে অনেকেই ছুটে আসেন এই হাটে। এখান থেকে খাওয়ার কিনে সন্তানের মুখে তুলে দেয় নিম্নবিত্ত মানুষরা। আবার অনেকে এখান থেকে খাবার কিনে বাড়ি বাড়ি বা হোটেলে নিয়ে বিক্রি করে। এখানের এমন খাওয়ার স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কম দামে পাওয়াটাই তাদের কাছে মূল বিষয়। দুপুর দুইটা থেকে শুরু হওয়া এই হাট চলে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত।

হাট ঘুরে দেখা যায় আরেক বিস্ময়, এখানে যারা বিক্রি করতে আসে তাদের প্রতি পোটলা বিক্রির পর ১০ থেকে ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে স্টেশন চাঁদাবাজদের। এনিয়ে খাবার বিক্রেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও কিছু করার থাকেনা তাদের।

কথা হয় হাটের বিক্রেতা কবিরের সঙ্গে। তিনি পেশায় বাবুর্চি। শহরের কমিউনিটি সেন্টারের বিয়ের অনুষ্ঠানের উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো তিনি এখানে নিয়ে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, এত দামি খাবার কিনে খাবার তো সাধ্য নাই, তাই উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো কিনে নিয়েই সন্তানের মুখে তুলে দেই।

এমন কেন হবে? সমাজের কিছু মানুষ না খেতে পেরে ফেলে দেবে, আর কিছু মানুষ সে খাবারই কিনে খাবে? এ প্রশ্নের কি উত্তর নেই?

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।