ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মশার যন্ত্রণায় কাতর হাজারীবাগবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
মশার যন্ত্রণায় কাতর হাজারীবাগবাসী হাজারীবাগে আর্বজনার স্তূপ। ছবি: বাংলানিউজ

রাখিলেন সাঁই কূপজল করে,

আন্ধেলা পুকুরে...

কবে হবে সজল বরষা?

রেখেছি মন সেই ভরসা।

আমার এই ভগ্ন দশা,

যাবে কত দিন পরে?

মানবধর্ম, সাঁইজির আরাধনা আর জীবের ভজন সংক্রান্ত লালনের এই আধ্যাত্মিক গানের অর্থ যাই হোক, রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার মানুষের কাছে তার অর্থ যেন ভিন্নরকম। মশার যন্ত্রণা আর বিরক্তিকর গুনগুনানি এ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে গানের অর্থ যেন বদলে ফেলেছে।

ট্যানারি শিল্পের জন্য হাজারীবাগ এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়েছে অনেকে আগেই। সরকারের প্রচেষ্টায় চামড়াশিল্পকে হাজারীবাগ থেকে সাভারে সরিয়ে নেওয়া হলেও দুর্গতি এখনও কমেনি। এলাকাটি পুরোপুরি পরিষ্কার হতে যেন লেগে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। তেমন অভিব্যক্তিই হাজারীবাগে বসবাসরত বাসিন্দাদের। হাজারীবাগে আর্বজনার স্তূপ।  ছবি: বাংলানিউজশুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হাজারীবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায় পুরো এলাকার বিভিন্ন স্থানে আর্বজনার স্তূপ আর ড্রেনে বদ্ধ ময়লায় পরিপূর্ণ প্রবাহহীন পানি। এসব ময়লার স্তূপ আর কালো পানির ড্রেন মশা বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ স্থান হয়ে আছে।

পিলখানার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতর এলাকা পার হওয়ার পরই সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলানোর ডাস্টবিনগুলো আর চোখে পড়েনি। এলাকার মানুষজন বাধ্য হয়ে ময়লা ফেলছেন রাস্তার উপরে ড্রেনের পাশে। আর সেসব ময়লা ড্রেনে পড়ে পানির প্রবাহের ধারা আটকে যাচ্ছে, মশার উপযোগী আবাসস্থল ছাড়াও সৃষ্টি হচ্ছে পচা দুর্গন্ধ।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা এক-আধবার মশা নিধনে ওষুধ ছিটিয়ে ও ড্রেনের ময়লা রাস্তায় উঠিয়ে রেখেই খালাস। পরবর্তীতে তাদের দেখা মেলে বহুদিন পর। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

হাজারীবাগ বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সন্ধ্যার পর থেকে মশার যন্ত্রণায় এলাকায় টেকা দায়। মশার উপদ্রব দিনের বেলায় তুলনামূলক কম। তবে সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে ধূপ জ্বালিয়ে বসে থাকতে হয়। তারপরও রেহাই পাওয়া যায় না। বেশি সমস্যা হয় বাসাবাড়িতে। সেখানে তো ধূপ জ্বালানো যায় না। সন্ধ্যার পর থেকে বাসার ছেলেমেয়েরা খাটে মশারি টানিয়ে পড়তে বসে। কারণ, বাসায় বসে অ্যারোসল স্প্রে এবং কয়েল জ্বালিয়েও মশার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব না।

সাইকেল গ্যারেজের মালিক আকতার হোসেনের গ্যারেজের পাশেই ময়লার স্তূপ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের সময় তো দোকান খোলাই সম্ভব হয় না। ঈদের পর এলাকা পরিষ্কার হয়ে গেলেই খোলা হয়। তারপরও অনেক মশা। কারেন্টের ব্যাট দিয়ে মশা মারি। ট্যানারিগুলো সাভারে সরিয়ে নিলেও এখানকার বিল্ডিংগুলো এখনও চামড়ার গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখান থেকে ময়লা ড্রেনে জমা হয়ে পড়ে থাকে।

হাজারীবাগের বিজিবি ছাত্র হোস্টেল এলাকায় বসবাসরত ফার্মাসিস্ট আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বাংলানিউজকে বলেন, এই এলাকায় মশাসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গের পরিমাণ অনেক আগে থেকেই বেশি। এছাড়া এগুলোর আকারও অনেক বড়। মশাগুলো কামড়ালে জ্বলে আর সেখানে ঘামাচির গোটার মত হয়ে যায়। বিশেষ করে অ্যালার্জির রোগীদের জন্য খুব ভোগান্তি হয়। ট্যানারি কারখানাগুলো পুরোপুরি সরেনি। ওগুলোর গোডাউন আছে। তা থেকেই বর্জ্য পদার্থগুলো মশাগুলোকে বিষাক্ত পদার্থে হৃষ্টপুষ্ট করে তুলছে। বর্জ্য পদার্থগুলো ড্রেনগুলোকেও বদ্ধ করে তুলছে। তাই এই ট্যানারিগুলোকে সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করার আগ পর্যন্ত কোনোভাবেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব না।

হাজারীবাগ এলাকার পাশেই কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অবস্থিত লাইফ অ্যান্ড কেয়ার হাসপাতালে কর্মরত কর্মীরা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা প্রায়ই আসেন। ডেঙ্গু তুলনামূলক কম এখন। আর এই হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের এলাকায় মশার প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। হাসপাতালেও আমাদের এই মশানিধন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
এমএএম/এএটি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।