ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নাটোরে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে দুধ সংগ্রহ বন্ধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
নাটোরে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে দুধ সংগ্রহ বন্ধ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর: দুধ সংকট ও গুণগতমানের দুধ না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে নাটোরে মিল্কভিটার দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই নাটোরের বাসুদেবপুর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক রেহেনা রহমান (সমিতি) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের দুধ সংগ্রহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এতে এ এলাকার ১৪টি সমিতির প্রায় দু’শতাধিক খামারি তাদের প্রতিদিনের উৎপাদিত দুধ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। সকালে দুধ নিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ দুধ সংগ্রহ করেননি। এ ঘটনার প্রতিবাদে সড়কের ওপর দুধ ঢেলে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরে দুপুরের দিকে খামারিরা দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে পুনরায় দুধ ক্রয় কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছেন।

খামারিদের দাবি, বাজারের তুলনায় কম দামে এবং গুণগত মানেরই দুধ তারা মিল্কভিটায় সরবরাহ করে থাকেন। একই সঙ্গে বেশি দুধ বিক্রি করার সুযোগও রয়েছে এখানে। কিন্তু মিল্কভিটা থেকে চাষিদের সেভাবে কখনই সহায়তা দেয়া হয় না।

নাটোর মিল্কভিটা দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকায় নাটোর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রেটি চালু হয়। শুরুতে ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার লিটার দুধ ক্রয় করা হতো। এজন্য ৬৭টি সমবায় সমিতির ১২০০ জন সদস্য ছিল।

এখন তা কমে ১৪টি সমিতিতে দাঁড়িয়েছে এবং এর সদস্য সংখ্যা দু’শতাধিক। তারা প্রতিদিন দুধ সরবরাহ করেন। তবে গত ৬ মাস ধরে ভাটা পড়ে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ লিটার দুধ ক্রয় করা হয়। সর্বশেষ ২০০ থেকে ৩০০ লিটার করে দুধ সংগ্রহ করলেও সেটাও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
নাটোর মিল্কভিটার দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, এ কেন্দ্রে সর্বশেষ দুধ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতিদিন ৩০০ লিটার। কিন্তু দুধ সরবরাহ কমতে কমতে গত মাস থেকে ১৪০ লিটার থেকে ১৭০ লিটার দুধ সরবরাহ হচ্ছে।

ফলে ১২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গুণগত মান ও দুধ সরবরাহের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড নাটোরে মিল্কভিটার দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শুধু দুধ সংগ্রহ বন্ধ রেখে অফিশিয়াল কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে খামারিদের অভিযোগ, খামারের গাভী পালনে লোন সুবিধা, চিকিৎসা, ওষুধপত্রসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুধিধা দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অব্যবস্থাপনার কারণে এবং অলাভজনক পর্যায় সৃষ্টি হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব সমস্যার কারণে কেন্দ্রে দুধ সরবরাহ কমে গেছে। এজন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাই দায়ী।

চৌমহোনী ভোলারহাট সমবায় সমিতির সভাপতি মানিক চন্দ্র সরকার এবং বাসুদেবপুর সমবায় সমিতির সভাপতি কালিদাস ও খামারি জহুরুল ইসলাম বাবু বাংলানিউজকে জানান, দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় অনেক খামারিকে পথে বসতে হবে।

কারণ দুধ বাজারজাতের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তাদের লোকসান দিয়েই প্রতিদিনের উৎপাদিত দুধ অন্যত্র বিক্রি করতে হবে। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেত কামনা করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।