ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

একাত্তরে এদেশের ছোটরাও আনা ফ্রাংকের মত কষ্ট সয়েছিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
একাত্তরে এদেশের ছোটরাও আনা ফ্রাংকের মত কষ্ট সয়েছিল আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত "আনা ফ্রাংক- আ হিস্ট্রি ফর টুডে" শীর্ষক প্রদশর্নীতে বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি-কাশেম হারুন

হিটলারের হুইদি নিধনযজ্ঞকালে বলি হওয়া জার্মান কিশোরী আনা ফ্রাংকের জীবনী শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য আজও অনুসরণীয়, বিশেষ করে শিশু-কিশোর-যুবাদের জন্য। একাত্তরে বাংলাদেশের রক্তাক্ত স্বাধীনতাযুদ্ধে ছোটরাও আনার মতো ভয়ানক অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী শনিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত "আনা ফ্রাংক- আ হিস্ট্রি ফর টুডে" শীর্ষক প্রদশর্নী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আনা ফ্রাংকের ডায়রি নিয়ে এ প্রদর্শনী বাংলাদেশের মানুষকে একাত্ম করবে।

শুধু ঢাকায় নয়, প্রতিটি জেলায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হোক।

‘১৯৪৪ সালে মৃত্যুর প্রায় ৭০ বছর পরও আনা ফ্রাংক কী আশ্চর্য প্রাসঙ্গিক!’—একথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো বলেন, দুনিয়াজুড়ে এখন ১৫ জুলাই, ডায়েরি আর আনা ফ্রাংক যেন সমার্থক। আনা ফ্রাংক নামের দূর ইউরোপের এই কিশোরী পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশজুড়েও। স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও জানে আনার কথা। গোপন আস্তানায় পালিয়ে থাকার সময় আনার একমাত্র বন্ধু হয়ে উঠেছিল তার প্রিয় ডায়েরিটি।

নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত  বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল বলেন, আমস্টারডামের 'আনা ফ্রাংক হাউজ' বাংলাদেশে এমন একটি প্রদশর্নী করায় তাদের ধন্যবাদ জানাই। আনা ফ্রাংক খুব অল্প বয়েসে তার ডায়েরিতে মানবিকতা ও শান্তির কথাই বলে গেছে।

বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারিটা কুলেনারে বলেন, বর্তমান বিশ্বে আবারও যেন সন্ত্রাস ও ঘৃণা ফিরে আসছে। একে চলতে দেয়া যায় না। আনা ফ্রাংকের কথাই আমাদের শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে পারে।
মু্ক্তিযুক্ত জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলী বলেন, যুদ্ধকে মহিমান্বিত করতে এ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। বরং শান্তির কথা বলতেই এটির প্রতিষ্ঠা, যা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। ‘আনা ফ্রাংক- আ হিস্ট্রি ফর টুডে’ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারিটা কুলেনারেসহ অতিথিরা।  ছবি: কাশেম হারুনমু্ক্তিযুক্ত জাদুঘরের আরেক ট্রাস্টি সারোয়ার আলী বলেন, ছয় তলায় একটি গ্যালারি আছে, আনা ফ্রাংক মিউজিয়ামের দ্বারা আজ যার উদ্বোধন হল। রাখাইনে আনা ফ্রাংকের মত রোহিঙ্গা কিশোরীরা ধর্মীয় কারণে আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার বিরল নজির সৃষ্টি করেছে।

আমস্টারডাম আনা ফ্রাংক হাউজের প্রতিনিধি প্রিয়া মাসাদো বলেন, ১৯৪৪ সালে হিটলারের নৎসি বাহিনী আনা ফ্রাংক ও তার  পরিবারের ওপর অবর্ণনীয় নৃশংস নির্যাতন চালিয়েছিল। নাৎসিরা ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল। জার্মানির সেইসব বিপন্ন মানুষদের সঙ্গে মিয়ানমার কর্তৃক বিতাড়িত-নির্যাতিত আজকের রোহিঙ্গাদের কোনোও তফাত নেই।

আনার ডায়রি থেকে মিরপুর পাঠশালার ছাত্রী সীমা আক্তার পাঠ করে শোনায়। আনার ডায়রি যার নাম সে দিয়েছিল ‘কিটি’। ডায়েরিটি সে উপহার পেয়েছিল তার জন্মদিনে। আনার ইচ্ছে ছিল ডায়েরিটি থেকে বই করার। আনা হতে চেয়েছিল সাংবাদিক অথবা লেখক। প্রদশর্নীর আয়োজক কাউন্টার ফটো, ঢাকা'র চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক বক্তব্যে বলেন, আনার সেই স্বপ্ন এমন বিপুলভাবে পূরণ হবে আনা নিজেও হয়তো কল্পনা করতে পারেনি।

১৯৪৭ সালের ২৫ জুন প্রকাশিত হয় আনার ডায়েরির প্রথম সংস্করণ। বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেয় ১৩ বছর বয়সী এই মেয়েটির বিস্ময়করভাবে পরিণত লিখন-কুশলতা।  বহু ভাষায় অনূদিত হয় বইটি।

উল্লেখ্য, আন্নেলিস মারি ফ্রাংক বা আনা ফ্রাংক নামের এই জার্মান দিনপঞ্জি-লেখক কিশোরী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হিটলারের বর্বরোচিত হলোকাস্ট বা হইদিনিধনযজ্ঞে বলি হওয়াদের একজন। তার ডায়েরিতে ফুটে উঠেছে হলোকাস্টের নির্মমতার নানা দিক আর বিপন্ন ইহুদিদের মর্মান্তিক জীবন ও বাচার আকুতি। ইহুদি-নিগ্রহের এক পর্যায়ে সে মারা গেলেও মরণোত্তরকালে প্রকাশিত মাতৃভাষা জার্মানে তার লিখে যাওয়া দিনপঞ্জি ‘Het Achterhuis’ (ইংরেজিতে ‘The Diary of a Young Girl’) আজো হয়ে আছে নাৎসি বর্বরতার বিশ্বস্ত আর কালোত্তীর্ণ এক দলিল।

বাংলাদেশ সময়ঃ ১৩৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
কেজেড /  জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad