ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘এখানে টাকার খেলা, টাকা যার এলাকা তার’

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
‘এখানে টাকার খেলা, টাকা যার এলাকা তার’ অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ডে মানুষের ভোগান্তি/ ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: রাজধানীর রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত ইংলিশ রোডের বড় একটি অংশ ‘অবৈধ’ ট্রাক স্ট্যান্ডের দখলে। দখলের গ্যাঁড়াকলে পড়ে ওই সড়কে যানজটে দিন-রাত ভুগছেন যাত্রীরা।

আর সড়কের এ ‘দুর্ভোগ’ অবস্থার জন্য ট্রাফিক পুলিশকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে সড়কে ট্রাক রাখার সুযোগ দেওয়ায় এ এলাকা স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

 
 
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, ইংলিশ রোডের রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ট্রাকের দীর্ঘ সারি। কোথাও আবার একই সঙ্গে দু’তিনটা ট্রাক রাখায় যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো চলার জন্য ৭-৮ ফুট রাস্তা বাকি রয়েছে। ফলে সড়কের এই অংশে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।
  
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তার উপর ট্রাক স্ট্যান্ডের কারণে সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত এ রাস্তায় গাড়ি জমাট বেঁধে থাকে। পুলিশের কর্মতৎপরতায় মাঝে মধ্যে একটু স্বাভাবিক হলেও পরক্ষণেই সব ট্রাক মালিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
 
রাস্তার উপর ট্রাক রেখেছেন কেন জানতে চাইলে মিলন নামের এক ট্রাক চালক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাড়া হইলে চইলা যামু। আমগো স্ট্যান্ডে পার্ক বানাইতাছে এহন রাস্তায় রাহুম না-তো কই রাহুম। ’
 
তবে এখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনস্থ মালিটোলা পার্ক ছিলো বলে জানা গেছে। যা ট্রাক মালিকরা দখল করে স্ট্যান্ডে পরিণত করেছেন। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে পার্কের উন্নয়ন কাজ করছে।
 
এদিকে কথা বলতে বলতে চালক মিলন অন্যদেরকে ইশারা দিলে আরো পাঁচজন এসে এই প্রতিবেদককে ঘিরে ধরে। এ সময় তারা চড়াও হতে চাইলে আলমগীর হোসেন নামের একজন তাদেরকে শান্ত করেন।
নিজেকে ট্রাক স্ট্যান্ডের কর্মকর্তা দাবি করে আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের একটা স্ট্যান্ড ছিলো। সেখানে এখন সিটি কর্পোরেশন পার্ক বানাচ্ছে। আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে স্ট্যান্ডের জন্য জায়গা চেয়েছি, কিন্তু তারা দিচ্ছে না। এজন্য অনুমতি নিয়ে রাস্তার এক লেন ব্যবহার করি।
 
কার অনুমতি নিয়েছেন জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘এখানে টাকার খেলা। টাকা যার এলাকা তার। আপনি ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন’।
 
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তাঁতীবাজার মোড়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ট্রাফিক পুলিশের দুই জন সদস্য (কনস্টেবল) দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এই মোড়ে একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই), একজন সার্জেন্ট এবং কমপক্ষে দু’জন কনেস্টবল থাকার কথা বলে জানা গেছে।
 
পরে দুপুর ২টায় তাঁতীবাজার মোড়ের পুলিশ বক্সে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বসে আছেন সার্জেন্ট ওহিদুল ইসলাম। সড়কে ট্রাক রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। বাইরে আমাদের টিআই হিরোন স্যার আছেন, ওনার সঙ্গে কথা বলেন।
 
টিআই হিরোন সেখানে নেই জানিয়ে তার মোবাইল নম্বর চাইলে হিরোনের মোবাইলে কল করে সাংবাদিকরা ট্রাকের বিষয়ে কথা বলতে চান বলে জানান সার্জেন্ট ওহিদুল। পরে মোবাইল কলটি বিচ্ছিন্ন করে ওহিদুল প্রতিবেদককে বলেন নম্বর দেওয়া যাবে না।
 
এদিকে অন্য মাধ্যম থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে টিআই হিরোনকে কল করলে তিনি বলেন, আমি নাইট ডিউটি করায় দুপুর ৩টায় ডিউটিতে এসেছি, সকালে ছিলাম না। আর ট্রাক মালিকদের ট্রাক রাখার জায়গা নেই, এজন্য তাদেরকে একলেন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
 
রাস্তার উপর এভাবে ট্রাক রাখার অনুমতি পুলিশ দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আন-অফিসিয়াল অনুমতি। পুলিশের টাকা নেওয়ার অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বিষয়টি এড়িয়ে বলেন মানুষ অনেক কিছুই বলতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
এসআইজে/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।