ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আগুন পোহাতে গিয়ে ৯ দিনে ১০ প্রাণহানি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
আগুন পোহাতে গিয়ে ৯ দিনে ১০ প্রাণহানি রমেক হাসপাতালে ভর্তি দগ্ধ রোগীরা। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জবুতবু উত্তরবঙ্গের মানুষ। আগুন তাপিয়ে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। রংপুর বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ৯দিনে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

এছাড়া দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রায় ৫৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাতে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

রমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. তউহিদ আলম বাংলানিউজকে জানান, দগ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে ৫৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে।  

‘এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর, যাদের শরীরের ৫৫ থেকে ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আর ৫৫ জনের শরীরের প্রায় ৩০ থেকে ৫৫ শতাংশ পুড়েছে। ’

এদের বেশির ভাগই নারী, বৃদ্ধ ও শিশু বলে জানিয়েছেন তিনি।  

নিহতরা হলেন- ঠাকুরগাঁও শহরের থানাপাড়ার আঁখি আক্তার (৪৫), রংপুরের জুম্মাপাড়া পাকারমাথার রুমা খাতুন (৬৫), কাউনিয়া উপজেলার গোলাপী বেগম (৩০), লালমনিরহাট সদরের শাম্মী আখতার (২৭), পাটগ্রাম উপজেলার ফাতেমা বেগম (৩২), আলো বেগম (২২), নীলফামারী সদরের রেহেনা বেগম (২৫), রংপুর সিটি করপোরেশেনের মাহিগঞ্জের চাঁন মিয়ার স্ত্রী মনি বেগম (২৫) এবং নীলফামারী সদরের সোনারমের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী মারুফা খাতুন (৩০) ও সর্বশেষ রোববার রাত আটটার দিকে লালমনিরহাট সদরের রাজপুর ইউনিয়নের শুকমনি রায় (৬৯)।

ভুক্তভোগীরা জানান, শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র পরিবারগুলো। তারা শীত বস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করতে গিয়েই এই দুর্ঘটনায় পড়েছে। আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতায় দগ্ধ হচ্ছেন নারী ও শিশুরা।  

খোলা আগুনে অসতর্কভাবে আগুন পোহাতে গিয়ে এসব দুর্ঘটনা রোধে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রোববার সরেজমিনে রমেক হাসপাতালে গিয়ে যায়, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সক্ষমতার তুলনায় প্রায় তিনগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই জায়গার অভাবে হাসপাতালের মেঝে বিছানা পেতেছেন।

সাম্প্রতিক উত্তরাঞ্চলে দেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা খড়, পুরাতন কাপড়, টায়ার অথবা চুলার খোলা আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছেন! 

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সুমি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ১ মাস ৭ দিনের নবজাতককে কোলে নিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন। অসাবধানবশত আগুন তার কাপড়ে ধরে যায়। দ্রুত তিনি আগুন থেকে বাঁচাতে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। নবজাতকের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়।

হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ছয় বছর বয়সী জান্নাতী খাতুন। যার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে আগুনে।  

তার বাবা সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে খড়ের আগুনে তাপ পোহাচ্ছিল সে। হঠাৎ তার শরীরের কাপড়ের নিচে আগুন ধরে যায়। প্রথমে বুঝতে না পারলেও যখন সে বুঝতে পারে ততক্ষণে তার শরীরের উপরের দিকে আগুন ধরে যায়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. তউহিদ আলম বলেন, সক্ষমতার চেয়েও প্রায় তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিনিয়ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্যে আগুন পোহালে সতর্কতা অবলম্বনের ওপর জোর দেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।