ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ কেটে নেওয়া সরকারি গাছ

নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আড়াই শতাধিক সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাতারদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন আকন্দের বিরুদ্ধে।

একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা মূল্যের গাছগুলো মাত্র ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় উপকারভোগীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

এদিকে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন আকন্দ গাছ কাটার সত্যতা স্বীকার করলেও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, ওই গাছগুলো স্থানীয় আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নিয়ে তার নেতৃত্বে সেখানে রোপণ করেছিলেন।

৩/৪ দিন আগে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ইউপি সদস্য, জলিলসহ অন্যান্য উপকারভোগীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রেজুলেশন করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছোট-বড় মিলে ১৬০টি গাছ কাটা হয়েছে এবং তা ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

যার ১০ ভাগ টাকা ইউনিয়ন পরিষদ পাবে এবং বাকি টাকা রোপণকারীদের দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সেখানে পুনরায় গাছ রোপণের জন্য ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ফের গাছের চারা রোপণ করা হবে।

স্থানীয় উপকারভোগী সদস্যরা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, ২০০৩ সালে নাটোর বনবিভাগ থেকে ইউকেলাপটারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩ হাজার গাছের চারা এনে তারা সামাজিক বনায়নের প্রায় ২০ জন সদস্য উপজেলার একলাশপুর বাজার সংলগ্ন পানাউল্লাহ খালের দুই ধারে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রোপণ করেছিলেন। এর মধ্যে ২৬৮টি গাছ বেঁচে ছিল।

তারা দীর্ঘদিন থেকে এই গাছগুলো পরিচর্যা করে বড় করেছিলেন। স্থানীয় কৃষকরা খালের দুধারে জমিতে কৃষিকাজ করে এসব গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিতেন। অথচ তিনদিন আগে স্থানীয় ছাতারদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন তাদের বলেন, এই গাছগুলো ইউনিয়ন পরিষদের, তাই তারা কেটে নেওয়া হবে।
এসময় সামাজিক বনায়নের কয়েকজন সদস্য এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে চেয়ারম্যান তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার লোকজন দিয়ে জোড় করে গাছগুলো কেটে নিয়ে যান।

উপকারভোগী বনায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল, সহ সভাপতি এরশাদ সরদার, সদস্য মামুন হোসেন, মুজিবুর রহমান, জাহিদুল ও হালিমা বেগমসহ আরো অনেকে বাংলানিউজকে জানান, চেয়ারম্যান জোড় করে গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে তাদের কোনো কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। কথা বললেই  পুলিশে দেওয়ার হুমকিসহ মারপিটের ভয় দেখাচ্ছেন। তাদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে যেতেও পারছেন না। শুধুমাত্র বনবিভাগকে মোবাইল ফোনে জানালে তারা সরজমিনে এসে দেখে গেছেন।

সিংড়া উপজেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে চেয়ারম্যান গাছগুলো কেটেছেন। ঘটনার সত্যতা আরো যাচাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সন্দ্বীপ কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কর্তনকৃত ২২২টি গাছ উদ্ধার করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও স্থানীয় মজিবর রহমানের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নিয়ম নীতি অনুসরণ করে গাছগুলো কেটে থাকলে তা আগামী তিনদিনের মধ্যে উন্মুক্ত ভাবে নিলামে বিক্রি করে টাকা ইউনিয়ন পরিষদসহ উপকারভোগীদের মধ্যে বন্টন করা হবে। নিয়ম কানুন ব্যাতিত গাছ কাটার প্রমাণ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।