ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

প্রযুক্তি প্রিন্ট মিডিয়াকে ঠেলে দেবে চিরমৃত্যুর গহ্বরে 

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
প্রযুক্তি প্রিন্ট মিডিয়াকে ঠেলে দেবে চিরমৃত্যুর গহ্বরে  ..

আছে প্রোডাক্টের বৈচিত্র্য বাড়ানোর বিষয়। এর মধ্যে ডিজিট্যাল প্রোডাক্টের দিকে ধীরে ধীরে ঝোঁকার ব্যাপারও থাকছে। যে যুগের যে চাহিদা। যেমন একটি নতুন বেতারকেন্দ্র খুলবেন তারা। যার উদ্বোধন হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। যার নাম ‘Money FM 89.3’। 

আরও পড়ুন>> সিঙ্গাপুরেও মরতে বসেছে প্রিন্ট সংবাদপত্র

এছাড়াও নতুন একটা প্রজেক্টে যোগ দেয়া। এই প্রজেক্ট অ্যামাজন লজিস্টিক্সের যুগে নিউজপেপার ডেলিভারির বিষয়টার মূল্যায়ন করবে।

বেশ কয়েকটি নার্সিং হোম ও শপিংমলে বড় ধরনের বিনিয়োগের পরিকল্পনাও আছে SPH-এর। মূল ব্যাপারটা হলো ক্রস সাবসিডির দিকে যাওয়া। যাতে কাগজের মরণ দশা হলে যেন অন্য খাতের আয় থেকে ভর্তুকি দেয়া যায়।

এর মানে সহায়ক বা সম্পূরক ব্যবসা গড়ে তোলা । ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এনসিলারি বিজনেস’। যাতে তাদের মূল যে সংবাদপত্র ব্যবসা সেটিকে টিকিয়ে রাখা যায়, সুনাম টিকিয়ে রাখা যায়। এই চিন্তাটা, এই বিপদনাশন থিমটা এসেছে ইউরোপ থেকে। সেখানকার দুটো মিডিয়া গ্রুপ Schibsted ও  Axel Springer সহায়ক ব্যবসা খুলেছে তাদের ঐতিহ্যবাসী ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে। ঝড়ো পরিস্থিতিকে সামাল দিতে। সেটা বেশ কাজও দিয়েছে।  

Anthony Tan-এর বয়স এখন ৪৪ বছর। দুনিয়াব্যাপী নিউজ ইন্ডাস্ট্রির সব হালফিল তথ্য, সব ভালোমন্দের খবর, সব ধরনের সুবাতাস-কুবাতাসের খবর তার হাতে মুঠোয় । ২০১৫ সালে নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন SPH-এ । ১৮ মাস আগে প্রমোশন পেয়ে নতুন পদে। SPH-এর  বেশিরভাগ শীর্ষ পদধারীদের মতো তারও আছে সরকারের  উচ্চ পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি বেসরকারি চাকরির অভিজ্ঞতাও আছে তার। রিটেইল মল এবং স্বাস্থ্যখাতে । এসব অভিজ্ঞতা তার নতুন দায়িত্ব পালনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে, রাখবে।

২০১৭ সালে তার কাজের পরিধি বেড়েছে। কোম্পানির সব প্রকাশনা-ব্যবসার দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছে। যা ইংরেজি, মালয়, তামিল মিডিয়া গ্রুপ এবং চীনা মিডিয়া গ্রুপ---এভাবে আলাদা আলাদা ভাষায় বিভক্ত।

তান-এর কাজটা বেশ কঠিন। মিডিয়া থেকে তাদের আয়ের তিন ভাগের চার ভাগ আসতো। কিন্তু এখন গুগল আর ফেসবুকময় যুগে কোম্পানির লাভের খাতায় মিডিয়ার অবদান মাত্র ৩৫ শতাংশ। ক্রস সাবসিডি ড্রাইভের দিকে –মানে সহায়ক বিকল্প ব্যবসার দিকে যেতেই হচ্ছে তাদের। আর এই সহায়ক ব্যবসাই পালন করবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা।

সিঙ্গাপুরে গুগল এবং ফেসবুক দুটোই আলিশান অফিস খুলে বসেছে। তান স্বীকার করলেন এই দুই বিশাল দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করে টেকা খুবই কঠিন। ইউরোপের দেশগুলো গত বছর ৫৩০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে গুগলকে অনিয়ম আর সেবার ফাঁকির, অক্ষমতার কারণে।  

গুগলের অনেক সেবার কার্য়কারিতা অনেক দেশে ম্লান। সেজন্য এবং নানা নিয়মভঙ্গের কারণে অনেক জরিমানা গুনতে হচ্ছে গুগলকে। যেমন দক্ষিণ কোরীয় ভাষার অভিনবতার কারণে সেখানে গুগল ম্যাপ খুব একটা কাজ করে না।  

তাই বলে গুগলকে পদে পদে আটকে দেবার বা জরিমানার শেকল পরাবার পক্ষপাতী নন তান। পক্ষপাতী নন আইনি মারপ্যাঁচে ফেলে কাবু করারও। সংরক্ষণবাদিতা পছন্দ নয় তান-এর। অনেক দেশই এই সংরক্ষবাদিতা পথে হাঁটছে। এভাবে তারা চাইছে গুগল ও ফেসবুকের একচেটিয়া সাম্রাজ্যকে ঠেকাতে। চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, জাপান এই পলিসি নিয়েছে। চীনারা এমন ব্যবস্থা নিয়েছে যাতে তাদের দেশীয় কোম্পানির বিকাশ ঘটে আগে।  

সিঙ্গাপুরে সেটা সম্ভব নয়। সিঙ্গাপুর অনেক বেশি আন্তর্জাতিক, অনেক বেশি গ্লোবালাইজড। তান-তাই মনে করেন নতুন চিন্তা দিয়েই, নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়েই গুগল ও ফেসবুকের মতো দুই ‘mammoth giant’-এর প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে। অনেক সহায়ক ও বিকল্প ব্যবসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।  এজন্যই তান ও তার কোম্পানি জাতীয় টেলিভিশনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চায়। ব্যবসাকে বহুমুখী করতে চায়। তারা জয়েন্ট ভেঞ্চারে যাচ্ছেন।  

টিভি যুক্ত হলে নতুন আয়ের পথ হবে। সিঙ্গাপুরের একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে এখানে বিজ্ঞাপনদাতার অভাব নেই। সে সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে। সংবাদপত্রের পাশাপাশি সহায়ক ব্যবসাগুলো আয়ের নতুন দরজা খুলবে। টিভি, নার্সিং হোম, রেডিও নানা দিকে নিজেদের আয়ের পথ খুঁজতে হবে।

তান-এর ভাষায়, সংবাদপত্রের সুদিন একদিন ফুরিয়ে যাবে(the good days of print would come to an end)। আজ হোক কাল হোক। ডিজিটাল প্রযুক্তি ছাপানো সংবাদপত্রকে ঠেলে দেবে চিরমৃত্যুর গহ্বরে।
 
SPH কোম্পানি এ বছর ৩৪ বছরে পা রেখেছে। নিউজপেপার কোম্পানি হিসেবে টিকে থাকার জন্য তারা এখন নানা সহায়ক ব্যবসা উদ্যোগের দিকে যাচ্ছে। শুধু সংবাদপত্র দিয়ে আর ব্যবসার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা যাবে না। সেজন্য চাই আয়ের নব নব সহায়ক উদ্যোগ। ছাপানো পত্রিকার মরণদশাকালে তান ও তার কোম্পানি সেটা বুঝেছে। বুঝেছে, রেভিনিউ না বাড়লে ঐতিহ্যের সলতেও যাবে নিভে। টঙ্কা হি কেবলম-টাকাই সব, আয়ই সব।  

ছাপানো কাগুজে পত্রিকার তেল ফুরিয়ে আসার দিন ঘনিয়ে এলো বলে!

বাংলাদেশ সময়:১১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।