ঢাকা, বুধবার, ২৭ চৈত্র ১৪৩০, ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বছরের পর বছর বিনা বেতনে পাঠদান, আর কত? 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৮
বছরের পর বছর বিনা বেতনে পাঠদান, আর কত?  প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকরা-ছবি-সুমন শেখ

ঢাকা: ‘জীবন যাবে, তবে এবার দাবি আদায় না করে রাজপথ ছাড়বো না। আর কত সহ্য করবো, ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছি। নিজের জমি বন্ধক রেখে সংসার চালাচ্ছি। অনেক আশ্বাসে এতদিন পার হলো আর কোনো আশ্বাস না।’

বহু আক্ষেপ ও ক্ষোভ ঝরানো কথাগুলো বললেন অধ্যক্ষ আতিকুর রহমান। গত ১০ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে দিন-রাত এক করে দিয়েছেন।

 

আতিকুর রহমানের মতো হাজারো নন-এমপিও শিক্ষক-কার্মচারী প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। শীতের রাতে রাস্তায় রাত্রিযাপন করছেন শিক্ষকরা। তাদের সবার কণ্ঠে আতিকুর রহমানের মতো একই আক্ষেপ ও ক্ষোভের সুর। আর চোখেমুখে দাবি আদায়ের দৃঢ় প্রত্যয়।  

আতিকুর রহমান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপের হাট প্রিয়বালা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখা এমপিওভুক্ত হলেও ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজ শাখা এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি।  প্রায় ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষাদান করছেন। সংসার চালাতে গিয়ে ধার-দেনা করে অসহায় হয়ে পড়েছেন এই শিক্ষক।  

আতিকুর রহমান বলেন, আমি স্কুল ও কলেজ দুই শাখার অধ্যক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হতে পারিনি। আমার সঙ্গে কলেজের আরও ১৫ শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী রয়েছেন। যারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা জাতি গঠনের কারিগর। আমাদের সঙ্গে এই অবিচার আর কতদিন সহ্য করবো।  

প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা-ছবি-সুমন শেখআমার কলেজে প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী রয়েছে। এইচএসসিতে পাসের হার ৮৫-৯০ শতাংশ যা, সাদুল্লাপুরের প্রথম অবস্থানে বলে যোগ করেন তিনি।  

এমপিওভুক্তির আন্দোলনে আতিকুরের সঙ্গী গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর কাশিয়াবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরাও। প্রায় চারশ শিক্ষার্থীর এই কলেজে ১৮ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী বিনা বেতনে কাজ করছেন। পীরগঞ্জ উপজেলায় ফলাফলের দিক থেকে এক নম্বরে অবস্থান কলেজটির।

‘আমাদের পায়ের তলায় মাটি নেই’ উল্লেখ করে কলেজটির অধ্যক্ষ মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখা বহু পুরনো। কলেজ শাখা চালু হয় ২০১০ সাল থেকে। সেই থেকে আমরা বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছি। অথৈ সাগরে পড়ার মতো অবস্থা আমাদের।  

তিনি বলেন, দিন দিন বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। কিন্তু আমরা বেতন পাচ্ছি না। সংসার চালাবো কি দিয়ে? এমপিওভুক্ত না হলে আর ঘরে ফিরবো না।  

প্রায় ১৬ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন রংপুর পীরগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্বপুর নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদ মিয়া। স্কুলটি ২০০১ সালে পাঠদানে অনুমতি পেলেও ৯ জন শিক্ষক ও পাঁচ কর্মচারী আজও বেতন পাননি।

শিক্ষক মোর্শেদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে একটা পয়সাও পায়নি। শিক্ষকরা নিজ খরচে স্কুল করছেন। অনেকবার সরকার থেকে আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছু পাইনি। আমার পীরগঞ্জের আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।  

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। পাঁচদিন টানা অবস্থান কর্মসূচি শেষে গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা।  

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৯০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৮
এমসি/আরআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।