ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তিন স্বপ্নপূরণ চান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
তিন স্বপ্নপূরণ চান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ও তার মা মালেকা বেগম। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: ‘মোস্তফা ছিলো সাহসী। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো- যুদ্ধ জয় করেই বাড়িতে ফিরবো। দোয়া করো মা, হয়তো আর ফিরে নাও আসতে পারি। সেই যে গেলো, ছেলে আর ফিরে এলো না’।

দেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজন মোস্তফা কামালের স্মৃতিচারণ করে কথাগুলো বলছিলেন মা মালেকা বেগম। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছেলের শাহাদাৎ বরণ ও স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ৪৬ বছর পর আজো ছেলের কথা মনে করে কাঁদেন, শোক-কষ্ট নিয়ে দিন পার করছেন তিনি।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, আবার বিজয়ের জন্য চরম আত্মত্যাগকারী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জম্মদিনও। তার ৭০তম জম্মবার্ষিকী বুধবার (১৬ ডিসেম্বর)।

এই দিনে সরেজমিনে ভোলা শহরতলীর আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বীরমাতা মালেকা বেগমের চোখে-মুখে বয়সের ছাপ, নানা অসুখেও আক্রান্ত। তবে একা দাঁড়াতে না পারলেও কথা বলতে পারেন। জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করেও মালেকা বেগম বেঁচে আছেন একজন গর্বিত মা হয়েই।

মৃত্যুর আগে তিনটি স্বপ্নপূরণ দেখে যেতে চান তিনি। সরকারের কাছে বসবাসের জন্য বীরনিবাস, ছেলের নামে প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মহাবিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং আখাউড়ায় ছেলের শহীদ হওয়ার সম্মুখযুদ্ধের স্থানে মসজিদ ও স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি।

বিশেষ দিন ছাড়া তাদের কেউ খোঁজ নেন না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মা মালেকা বেগম।

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা-ভাইসহ অন্যরা।  ছবি: বাংলানিউজ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। বাবা হাবিবুর রহমান ছিলেন হাবিলদার।

১৯৮২ সালে মেঘনা নদীর ভাঙনে দৌলতখানের বাড়িটি বিলীন হয়ে গেলে সদরের মৌটুপী গ্রামে চলে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশন সেখানে ৯২ শতাংশ জমিতে ‘শহীদ স্মরণিকা’ নামে একতলা পাকা ভবনটি নির্মাণ করে পরিবারটিকে পুনর্বাসন করেছে।

সময়ের ব্যবধানে ঘরটি এখন জরাজীর্ণ, দেয়ালের চারপাশে ফাটল তৈরি হয়েছে। সেখানেই মা মালেক বেগম পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যদের নিয়ে দুর্ভোগে-কষ্টে দিনযাপন করছেন।  

প্রয়াত হাবিলদার হাবিবুর রহমানের ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে মোস্তফা কামাল ছিলেন সবার বড়। তার স্ত্রী পিয়ারা বেগম ২০০৬ সালে ও একমাত্র ছেলে মোশারেফ হোসেন বাচ্চু ১৯৯৫ সালে মারা গেছেন। পুত্রবধূ পারভিন আক্তার মুক্তি বেঁচে থাকলেও নাতনি অনামিকা ২০০৪ সালে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

মোস্তফা কামালের বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ও তার দুই ছেলে-মেয়ে বেঁচে আছেন। তিন বোনের মধ্যে জাহানারা মারা গেলেও অন্য দু’জন হোসনে আরা ও হাসনে আরা বেঁচে আছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বামীসহ মালেকা বেগম হারিয়েছেন পরিবারের ৫ সদস্যকে। ১৬ ডিসেম্বর ছেলের জন্মদিন, আবার এ দিনই বিজয় দিবস। এমন দিনে মোস্তফা কামালকে জন্ম দিয়ে গর্বিত বলেও জানান তিনি।

মোস্তফা কামালের বড় ভাই বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সেলিম জানান, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটির অবস্থাও খুবই জরাজীর্ণ। এটির জাতীয়করণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান তিনি।

আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. বশির আহমেদ বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার যেখানে বসবাস করছেন, সে গ্রামটির নাম বীরশ্রেষ্ঠ  মোস্তফা কামাল নগর নামে নামকরণ করার কথা থাকলেও আজো হয়নি। তাই এ নামকরণসহ তার নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিকে দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবি জানাচ্ছি’।

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৭১তম জম্মদিনে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মহাবিদ্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।  ছবি: বাংলানিউজবীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৭১তম জম্মদিনে শনিবার সকালে কলেজ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান বশির আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সেলিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রবীণ সাংবাদিক এম এ তাহের ও ভোলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সামস উল আলম মিঠু।

ভোলা প্রেসক্লাবের আয়োজনেও পালিত হচ্ছে দিনটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad