ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মৌলভীবাজারের ভয়াল পিটিআই পরিখা ঘিরে সৌধ গড়ার দাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
মৌলভীবাজারের ভয়াল পিটিআই পরিখা ঘিরে সৌধ গড়ার দাবি এই সেই ভয়াল পিটিআই পরিখা, যা ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের একইসঙ্গে রক্ষণ-দুর্গ এবং নির্যাতনকেন্দ্র; ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ১৯৭১ সালের ভয়াল স্মৃতিবাহী মৌলভীবাজার পৌরসভার বনবীথি আবাসিক এলাকা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এখানকার প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে (পিটিআই) পাকিস্তানি হানাদার সেনারা তৈরি করেছিল পরিখা (বাংকার)। পিটিআই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর হেড কোয়ার্টার। এখানেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে এনে বর্বর নির্যাতন করা হত।

কখনো কখনো নির্যাতন করে মেরেও ফেলা হতো। তাই এই স্থানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতা এবং সাধারণ মানুষের হাজারো দুর্ভোগ ও আত্মত্যাগের ইতিহাস।

পাকিস্তানি হানাদারদের রক্ষণ-দুর্গ এবং নির্যাতনকেন্দ্র পিটিআই পরিখা ঘিরে সৌধ গড়ার দাবি উঠেছে; ছবি: বাংলানিউজস্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের নানান অধ্যায়ের কথা এখনো, এই ৪৬ বছর পরেও, নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা ও অনালোচিতই রয়ে গেছে। অথচ মৌলভীবাজারের পিটিআইয়ের প্রতিটি দেয়ালে, পরিখার ভেতরে কতো বীভৎস, কতো ভয়াল-করাল নির্মমতার কাহিনী গুমরে মরছে আজও। এসব পৈশাচিক বর্বরতার অনেক আলামত এখনো টিকে আছে সেখানে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু আজকের কিশোর তরুণ রা, নতুন প্রজন্মের মানুষেরা এসবের তেমন কিছুই জানে না, বোঝে না, দেখে না।

রাষ্ট্র, সমাজ ও যাদের এসব জানাবার কথা তারা জানানোর, বোঝানোর কাজটি সেভাবে করেননি বলেই। দু:খের কথা, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পূর্ণ হলেও মুক্তিযুদ্ধের মর্মন্তুদ স্মৃতিবিজড়িত পরিখাটিকে পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ ও রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়নি বা হচ্ছে না। পিটিআই কতৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে জায়গাটিকে আলাদা করে রাখলেও সচেতন মহলের দাবি, এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে এ বিষয়ে কোনো সাড়া নেই, উদ্যোগ নেই।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির (পিটিআই) প্রবেশদ্বারে স্মৃতিবহ এই পরিখাটির ত্রিমুখ পিটিআই ভবনকে বেষ্টন করে আছে। সামনের দিকটি শুধু খালি। এর দেয়াল জুড়ে জমেছে ঘন শ্যাওলা আর ছত্রাক। তবে পরিখাটির উপরিভাগে বেশ যত্নের ছাপ। সেখানে বেশ গুছিয়ে ফুলের টব রাখা হয়েছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি সাধ্যমতো সম্মানের চেষ্টা যেন। তবে এটুকু কেবলই পিটিআই কতৃপক্ষের উদ্যোগে।

মৌলভীবাজার প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির পিটিআই) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক এস এম মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা যেটুকু পারি এই জায়গাটিকে যত্ন করে আগলে রাখি। সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করানো হয়। এর বেশি কিছু তো আমাদের একার পক্ষে করা সম্ভব হয় না। তবে এটিকে অনেক আগে সংরক্ষণ করে একটি স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা যেত। আমরা অনেকবার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু সাড়া মেলেনি।

এবিষয়ে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার শেখ আনসার আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই স্থানটিতে একটি স্মৃতি স্থাপনা নির্মাণের কথা একাধিকবার ভেবেছি। গত বছর সরকার বধ্যভূমিগুলোতে একই আদলের স্মৃতিসৌধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা পিটিআই বাংকারের প্রস্তাব সেখানে করেছি। দেখা যাক এখন কি হয়।
বাংলাদেশ সময়:১৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এমএইচকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।