ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ (ফাইল ছবি)

ঢাকা: আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের গণহারে হত্যা করে। আজকের এই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাঘন, মর্মন্তুদ স্মৃতিবাহী দিন।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে বাংলাদেশ ও বাঙ‍ালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্রে মাতে। যুদ্ধে জয়ী হলেও বাঙালি যেন আর কোনোদিন বিশ্বসভায়, জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।

 

এই ভয়ানক ষড়যন্ত্রের নীল নকশাটি বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরকে বেছে নেয়। তারা তাদের এদেশীয় বশংবদ ও সকল দুষ্কর্মের দোসর কুখ্যাত রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অগ্রগণ্য আলোকিত মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।  

পাকিস্তানি ঘাতক ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাকারী এদেশীয় ঘৃণ্য দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল, তা হিটলারের খুনে বাহিনী গেস্টাপোর বর্বরতাকেও হার মানায়।  

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাজাকার-আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রায়ের বাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা, মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে একে একে হাত-পা-চোখ বেঁধে দেশের খ্যাতিমান এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরে এসব জায়গায় পড়ে  থাকা আলোকিত এই মানুষগুলোর মৃতদেহ পাওয়ার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয় পাকিস্তানি ঘাতকদের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা। এ ঘটনায় স্তম্ভিত, হতবাক হয় বিশ্ববিবেক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বরকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী সংগঠন, নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন সংগঠনের দিনব্যাপী আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দেরিতে হলেও নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখনো অনেক খুনির বিচার চলছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দণ্ডিতদের একজন স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকদের দল জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা। এরই মধ্যে এই নরপিশাচের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াতের অপর নেতা মো. কামারুজ্জামান এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছে।  

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশার বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান বিদেশে পলাতক থাকায় বিচারের রায় কার্যকর করা এখনো সম্ভব হয়নি। তা না করা গেলেও মানুষরূপী এই দুই পলাতক পিশাচকে কোটি মানুষের ধিক্কার নিয়ে, মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়েই পৃথিবী থেকে একদিন বিদায় নিতে হবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এমএসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।