ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

স্বীকৃতিহীন ৪৪ শহীদ পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
স্বীকৃতিহীন ৪৪ শহীদ পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন ৪৪ শহীদ স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ

দিনাজপুর: দিনাজপুরের বহলা গণহত্যা দিবস পালিত হচ্ছে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর)। 

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বহলা গ্রামের ৪৪ জন নিরস্ত্র মুক্তিকামী বাঙালি। আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে যান আরো ৫ জন।

 

সেদিন শহীদদের একসঙ্গে গণকবর দেওয়া হয়েছিলো। ২০১২ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদের উদ্যোগে তাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে আজো স্বীকৃতি পাননি ওই ৪৪ জন শহীদ। অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে শহীদ পরিবারগুলো।  ৪৪ শহীদের নামের তালিকা

দিবসটি পালনে শহীদদের কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় আলোচনা সভা-দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বিরল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।  

সরেজমিনে গেলে মুক্তিযোদ্ধাসহ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ১৩ ডিসেম্বর উপজেলার ভাণ্ডারা ও রানীপুকুর ইউনিয়ন থেকে পিছু হটা হানাদাররা দিনাজপুর শহরের দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে বহলা গ্রামের লোকজনের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ জানতে চায়। খোঁজ না দেওয়ায় গ্রাম সার্চ করে। পরে ৪৪ জনকে ধরে এনে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। শহীদদের দু’জন বাদে ৪২ জনকে একসঙ্গে গণকবর দেওয়া হয়।  

সেদিনের ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া আনিছুর রহমান বলেন, ‘বহলা গ্রামটি ছিলো মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি, যেখান থেকে বিভিন্ন স্থানে অপারেশন চালাতেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান চাইলে গ্রামের কেউ দিতে না চাওয়ায় ৪৯ জনকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। তাদের মধ্যে ৪৪ জন শহীদ ও বাকি ৫ জন আহত হন। আমার পায়ে গুলি লাগলেও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাই। পরে নিজ খরচে চিকিৎসা চালাই। এ পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি’।  

বিরল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আলহাজ আবুল কাসেম অরু বলেন, ‘৪৪ শহীদের মধ্যে ৩৭ জনের নাম জানা গেছে, অন্য ৭ জন অজ্ঞাত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহীদ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা পাঠিয়েছি’।

শহীদ আব্দুল আলিমের ভাই বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শহীদদের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আসেনি। পরিবারগুলোকেও আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি। তবে বর্তমান এমপি খালেদ মাহমুদ চৌধুরী শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছেন। শহীদ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে’।

‘চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে যতোটুকু সম্ভব, তাদেরকে সহায়তা করেছি। সরকারিভাবে ওই ৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসনের অনুরোধ জানাই’।  

একই দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিজোড়া ইউনিয়ন কমান্ডার সার্জেন্ট (অব.) মো. মজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম রব্বানী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।