ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি চাল পাচার, অভিযোগ গুদাম কর্মকর্তাদের দিকে 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
সরকারি চাল পাচার, অভিযোগ গুদাম কর্মকর্তাদের দিকে  জব্দ সরকারি চাল/ফাইল ফটো

রাজশাহী: রাজশাহীতে সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাচারের চেষ্টায় গুদামের কর্মকর্তারা জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার ট্রাকচালক ফিরোজ আহমেদ। জব্দ প্রতিটি চালের বস্তার গায়ে লেখা ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ- ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মাহবুবর রহমান তার জবানবন্দি নেন।

জবানবন্দিতে ট্রাকচালক ফিরোজ আহমেদ জানান, রোববার সকালে মহানগরীর রহরমপুর এলাকার কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তি তার ট্রাকটি ভাড়া করে।

তাকে কাইয়ুম বলেন, সরকারি খাদ্য গুদাম ও বহরমপুর এলাকা থেকে আরো কিছু চাল নিয়ে তানোর উপজেলার কালিগঞ্জে যেতে হবে। সেই অনুযায়ী চুক্তি হয়। কাইয়ুমের কথা অনুযায়ী রোববার সকালে তিনি ট্রাক নিয়ে খাদ্য গুদামে যান।  

সেখানে কাইয়ুম ও গুদামের দু’জন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শ্রমিকরা ১৭৬ বস্তা চাল ট্রাকে তুলে দেন। তবে গুদাম থেকে বের হতেই পুলিশ তাকে ধাওয়া দিয়ে আটক করে চাল জব্দ করে।

রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, গ্রেফতার ট্রাক চালককে সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থিত করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মাহবুবর রহমান তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে ফিরোজ আহমেদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যা মামলা তদন্তের কাজে লাগবে।  

রোববার রাতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আটক ট্রাকচালক ছাড়াও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা।  

রোববার দুপুরে রাজশাহী সদর খাদ্য গুদাম থেকে কিছুটা দূরে মহানগরীর শালবাগান এলাকা থেকে চালসহ ট্রাকটি জব্দ করে পুলিশ। খাদ্য গুদাম থেকে সরকারি চাল পাচার করা হচ্ছে- এ তথ্যের ভিত্তিতেই ট্রাকটি আটক করা হয়।  

অভিযানের সময় চালের সঙ্গে চালানের কাগজ দেখাতে না পারায় ট্রাকসহ চালগুলো জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়। আটক করা হয় ট্রাকের চালক ফিরোজ আহমেদকে। ফিরোজ মহানগরীর হেতেমখাঁ এলাকার আফসার আলী মণ্ডলের ছেলে। দুপুরে চালগুলো জব্দ করা হলেও চালানের কাগজের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু খবর পাঠানোর পরও খাদ্য গুদামের কোনো কর্মকর্তা কাগজপত্র নিয়ে থানায় যাননি। আবার কোনো ডিলারও চালের মালিকানা দাবি করেননি। তাই চালগুলো পাচার হচ্ছিল ধরে নিয়েই মামলা করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ।  

পুলিশ জানায়, ট্রাকে মোট ১৭৬টি চালের বস্তা পাওয়া গেছে। প্রতিটি বস্তায় চাল রয়েছে ৩০ কেজি। বস্তার গায়ে লেখা আছে- ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ- ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’। বস্তার গায়ে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ এবং খাদ্য অধিদফতরের নামও লেখা রয়েছে।

ট্রাকসহ ১৭৬ বস্তা চাল আটকের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বোয়ালিয়া মডেল থানায় গিয়ে চালগুলো পরিদর্শন করেছেন। চাল পাচারের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটির তদারকি করেছে দুদক। সরকারি কর্মকর্তা থাকায় সংস্থাটি এ মামলার তদন্ত করতে চায় বলেও জানিয়েছেন দুদকের বিভাগীয় পরিচালক আবদুল আজিজ।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।