ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দুপুরের যাত্রাবিরতি সন্ধ্যায় 

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
দুপুরের যাত্রাবিরতি সন্ধ্যায়  যাত্রাবিরতি বাস। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর থেকে: মা নূরজাহান বেগম বমিটিংয়ে কাতর হয়ে জানালায় মাথা ঠেস দিয়ে বসে আছেন। বাস অর্ধেকের বেশি খালি থাকায় বাবা লতিফুর রহমান গিয়ে বসেছেন একেবারে পেছনের সারির মাঝ সিটে। এদিকে তাদের ছয় বছরের কন্যা রইসা রহমান একাধারে চিৎকার করেই যাচ্ছে-বাবা, আসো নেমে যাবো। ক্ষুধা লাগছে, নেমে যাবো। দুপুর পেরিয়ে তখন মাগরিবের আজান দেয় দেয় অবস্থা।

রইসার চেঁচা-মেচিতে মোটামুটি সবাই ‘বিরক্ত’। এ অবস্থায় লতিফুর পড়েছেন বিপাকে।

না পারছেন স্ত্রীর প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে, না পারছেন মেয়েকে খাওয়াতে।

আধা ঘণ্টা বাস চলার পর সিরাজগঞ্জের ‘অভি হাইওয়ে ভিলা’ হলো যাত্রাবিরতির স্থান। অসুস্থ স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে সবার আগেই নেমে গেলেন লতিফুর।  সহযাত্রীরাও সে সুযোগ করে দিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর নূরজাহান কিছুটা স্বস্তিতে। মেয়েও খুশি। বাসের অন্য যাত্রীরাও ক্ষুধা নিবারণ করে নিলেন।
 
সকাল ১০টায় কল্যাণপুর থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে হানিফ পরিবহনের বাসটি। গাবতলীর পর থেকেই অহেতুক জ্যামের কারণে চালককে কখনো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা গেলো না। কারণ একটু গতি বাড়াতেই তাকে বারবার ব্রেক ধরতে হয়। এভাবেই টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত আসতে দুপুর পেরিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু যখন পার হয় তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে। এই বুঝি নিভে গেলো দিনের আলো।  

সকালে গাড়িতে ওঠার সময় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। সবাই কাকভেজা হয়ে উঠেছেন বাসে। তারপর আবার জ্যামের কারণে দুপুরের যাত্রাবিরতি হলো সন্ধ্যায়।

এ বিলম্বতে ক্ষুধার জ্বালায় পেটে অস্তির অবস্থা। সব মিলিয়ে ভোগান্তিতেই কেটে গেলো দিন।  

অভি হাইওয়ে ভিলায় আহারের পর সহযাত্রী আমির হোসেন বললেন, ‘হাইওয়েতেও এই জ্যাম। দেখার কেউ নেই। একটি দেশ চলে কীভাবে?’ 

যেতে হবে রংপুর। সন্ধ্যা ছয়টা বাজলেও বগুড়া পৌঁছানো যায়নি। কয়টায় পৌঁছবো, রাত দশটার পর থেকে থাকার জায়গাটা পাওয়া যাবে কি না, এ সব ভাবনা মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে। সহযাত্রীর কথায় তাই তাল মেলানোর কোনো ইচ্ছেই আর হলো না। শুধু ‘হু’ বলে এড়িয়ে যাওয়াতেই স্বস্তি।

বগুড়া পার হয়েও রাস্তা এবড়ো-থেবড়ো বুঝাই গেলো ঝাকি খেয়ে। এ অবস্থায় চালক তার সমহিমায় কখনো পৌঁছতে পারলো না। এভাবেই ধীর আর দ্রুত গতির টানাপোড়েন’র মাঝে বাস যখন রংপুর মডেল মোড়ে এসে দাঁড়াল তখন রাত দশটা।

৩৪৯ কিলোমিটার রাস্তা পেরুতে সময় লেগে গেলো ১২ ঘণ্টা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ২৯ দশমিক ০৮ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় হলো এক ঘণ্টা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
ইইউডি/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।